খুলে দেও - জেমস জীপু রায়

ads20
    প্রেরিত পৌল মোট তিনবার মিশনারি যাত্রা করেছেন । প্রত্যেকটি যাত্রা মন্ডলীর ইতিহাসে ঐতিহাসিক এবং মুল্যবান দলিল হিসাবে বিবেচনা করা হয়।এই শতাব্দীতে সুসমাচার প্রচার করার জন্য  অনুপ্রেরণা ও উদাহরন হিসাবে সাধু পৌলকে অন্যতম আদর্শ বলে আমি মনে করি । সাধু পৌলের দ্বিতীয় যাত্রার একটি সংক্ষিপ্ত ঘটনা আমাকে বার বারঅনুপ্রেরনা যোগায় । যে ঘটনায় মুল চরিত্রে  একজন নারী,যিনি একজন ব্যবসায়ী । তার নাম লুদিয়া ।
    একজন মানুষ যখন নতুন জন্ম পায় তখন ঈশ্বর কিভাবে সেই জীবনটাকে তার গৌরবের নিমিত্ত ব্যবহার করতে পারেন তারই একটা  জলজ্যান্ত প্রমাণ লুদিয়ার জীবন । প্রভু যদি কাউকে মনোনীত করেন তবে তার জীবনের জন্য প্রভুর অপূর্ব পরিকল্পনা রাখেন । লুদিয়ার এই ঘটনা -ছোট একটি বন্ধ জানালা খুলে দিয়ে বিশাল সমুদ্র দেখার মত । ধাপে ধাপে প্রভু কিভাবে তার সন্তানদেরকে বৃদ্ধি দিতে থাকেন লুদিয়ার জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি  ।
    আসুন ,আমরা বাইবেলের সেই অংশটা দেখি (প্রেরিত ১৬ : ১২ - ১৫ পদ) ।
    “তথা হইতে ফিলিপীতে গেলাম; উহা মাকিদনিয়ার ঐ বিভাগের প্রধান নগর, রোমীয় উপনিবেশ। সেই নগরে আমরা কয়েক দিন অবস্থিতি করিলাম। আর বিশ্রামবারে নগর-দ্বারের বাহিরে নদীতীরে গেলাম, মনে করিলাম, সেখানে প্রার্থনা-স্থান আছে; আর আমরা বসিয়া সমাগত স্ত্রীলোকদের কাছে কথা কহিতে লাগিলাম। আর থুয়াতীরা নগরের লুদিয়া না¤œী একজন ঈশ্বর-ভক্ত স্ত্রীলোক, যিনি বেগুনিয়া  কাপড় বিক্রয় করিতেন, আমাদের কথা শুনিতেছিলেন; আর প্রভু তাঁহার হৃদয় খুলিয়া দিলেন, যেন তিনি পৌলের কথায় মনোযোগ করেন। তিনি ও তাঁহার পরিবার বাপ্তাইজিত হইলে পর তিনি বিনতি করিয়া কহিলেন, আপনারা যদি আমাকে প্রভুতে বিশ্বাসিনী বলিয়া বিবেচনা করিয়া থাকেন, তবে আমার গৃহে আসিয়া অবস্থিতি করুন। আর তিনি আমাদিগকে সাধ্যসাধনা করিয়া লইয়া গেলেন। 
    এই ঘটনাটি ফিলিপী নামক একটি শহরে ঘটেছিল । ফিলিপী ছিল  একটি শহর যেখানে সাধু পৌলের মাধ্যমে প্রথম বারের মত ইউরোপে  সুসমাচার প্রচারিত  হয়ে ছিল ।ঐ সময়ে এই স্থানে কোন যিহুদি সমাজ ঘর ছিল না বলে  যিহুদিদের একটি দল সেখানে একটি নদীর তীরে পর¯পর মিলিত হত ।
    সাধু পৌল ও তার  সঙ্গীরা সেখানে এই দলের কাছে  সুসমাচার প্রচার করল , ফলে সেই দলের মাঝে থাকা লুদিয়া , ঈশ্বর তার হৃদয় খুলে দেওয়াতে  যীশুকে তিনি গ্রহন করলেন । তিনি ও তার পরিবার বাপ্তিস্ম গ্রহন করলেন । এরপর লুদিয়ার অনুরোধের জন্য সাধু পৌল ও তার সঙ্গিরা তার বাড়িতে অতিথী হলেন ।  গল্পটি ছোট  আকারে হলেও  বিশ্বাসীদের জন্য অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে চিরকাল ।
      আসুন এবার দেখি লুদিয়ার চরিত্র কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ?  
    লুদিয়া হৃদয় খুলে দিলেন
     সুসমাচারের প্রতি সাড়া দেবার জন্য ঈশ্বর লুদিয়ার হৃদয় খুলে দিলেন । পরের কাজটি করলেন লুদিয়া যীশুকে গ্রহন করে । যখন আমারা কারো কাছে সুসমাচারের  প্রচার করি তখন যীশু  খ্রীষ্ট  সেই মানুষটার অন্তরের দরজায় কড়া নাড়তে থাকেন (প্রকাশিত ৩ : ২০ পদ) ।
     লুদিয়া যীশুকে তার অন্তরে প্রবেশ করতে দিলেন ত্রাণকর্তা প্রভু বলে। পরের বিষয়টি সত্যি আশীর্বাদের, তিনি ও তার পরিবার বাপ্তিস্ম  নিলেন ।  যখন আমরা হৃদয়ে যীশু খ্রীষ্টকে একমাত্র প্রভু হিসাবে  স্বীকার করি ও  স্থান দেই তখন আমাদের অন্তরে ও বাহিরে একটা পরিবর্তন দেখা যায়  সব কিছু নতুন  হয়ে যায় । বাইবেল বলে ,ফলতঃ কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পুরাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছে, দেখ, সেইগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে ( ২য় করি ৫: ১৭ পদ)।
    এটা একটি স্বর্গীয় বিধান যে,  আপনি জগত থেকে আলাদা হয়েছেন ; আপনি আর আপনাতে নেই কিন্তু খ্রীষ্টই  আছেন, যার জন্য এই পরিবর্তন । আমরা গানে গাই , পরিবর্তন নতুন জন্মের পরে ,আমার পরিবর্তন হয়েছে । এই পরিবর্তন বা নতুন জীবন শুধু যীশু দিতে পারেন ।  সমস্যা হল এই জগতে যারা নিজেকে খ্রীীষ্টয়ান  বলে পরিচয় দেয় , তাদের সবার জীবনে কি প্রভু বাস করেন ?  
    দৃঢ়তার সাথে এই প্রশ্নের উত্তরে  বলব , এই পৃথিবীর সকল খ্রীষ্টিয়ানরা  প্রকৃত বিশ্বাসী নয় । যীশু এই কথা খুব ¯পষ্ট ভাবে বলেছেন যে , সকলে স্বর্গে স্থান পাবেনা । আসুন দেখি যীশু কি বলেছেন, মথি ৭ : ২১ – ২৩ পদ অনুসারে  যাহারা আমাকে হে প্রভু, হে প্রভু বলে, তাহারা সকলেই যে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারিবে, এমন নয়, কিন্তু যে ব্যক্তি আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই পারিবে । 
    সেই দিন অনেকে আমাকে বলিবে, হে প্রভু, হে প্রভু, আপনার নামেই আমরা কি ভাববাণী বলি নাই? আপনার নামেই কি ভূত ছাড়াই নাই? আপনার নামেই কি অনেক পরাক্রম-কার্য করি নাই?  তখন  আমি তাহাদিগকে ¯পষ্টই বলিব, আমি কখনও তোমাদিগকে জানি নাই; হে অধর্মাচারীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও । তাহলে কে প্রকৃত বিশ্বাসী বা কে নামধারী  এর বিচার আমরা করতে পারি ? উত্তরে বলবো , অবশ্যই না ।   কিন্তু তারপরেও বাইবেল আপনাকে  একটি সু¯পষ্ট ধারনা দিয়েছেন যেন আপনি বুঝতে পারেন , দেখুন যীশু কি বলেছেন , তোমরা তাহাদের ফল দ্বারাই তাহাদিগকে চিনিতে পারিবে। লোকে কি কাঁটা গাছ হইতে দ্রাক্ষাফল, কিম্বা শিয়ালকাঁটা হইতে ডুমুর ফল সংগ্রহ করে? সেই প্রকারে প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফল ধরে, কিন্তু মন্দ গাছে মন্দ ফল ধরে । ভাল গাছে মন্দ ফল ধরিতে পারে না, এবং মন্দ গাছে ভাল ফল ধরিতে পারে  না (মথি ৭:১৬ -১৮ পদ) ।
    এবার আসুন নামধারী খ্রীষ্টিয়ান  স¤পর্কে  আমরা কি  বুঝি ?
    এরা বিশ্বাসী জীবন দাবী করে থাকেন  কারন তিনি জন্মগত খ্রীষ্টিয়ান অর্থাৎ তার বাবা-মা  খ্রীষ্টিয়ান ছিলেন ও একটি মন্ডলীর সদস্য ছিলেন। বাইবেল বলে , “যে কেহ তাঁহাকে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়”- যোহন ৩:১৬ পদ।  
    এই কথার  মানে হলো আপনার পিতা-মাতা কিম্বা আপনার পরিবার পরিজন খ্রীষ্টিয়ান ছিলেন বলে আপনি খ্রীষ্টিয়ান নয় । আপনাকে ব্যক্তিগত ভাবে যীশু খ্রীষ্টকে  গ্রহন করতে হবে । অনেকে দাবী করেন যে, তিনি বাপ্তিস্ম  নিয়েছেন তাই তিনি খ্রীষ্টিয়ান  কিন্তু বাইবেল বলে তা নয় –(প্রেরিত ১৬ : ৩১ পদ ) তাঁহারা কহিলেন, তুমি ও তোমার পরিবার প্রভু যীশুতে বিশ্বাস কর, তাহাতে পরিত্রাণ পাইবে ।
    আচ্ছা ধরুন কেউ যদি দাবি করেন যে, তিনি নিয়মিত উপাসনা যান  দান- দশমাংশ দেন , সৎ কাজ করেন অথবা মন্ডলীর  কোন গুরুত্ব পুর্ন দায়িত্বে আছেন । এতেই কি তিনি দাবি করতে পারেন যে, তিনি প্রকৃত বিশ্বাসী ? বাইবেল বলে  না  , বাইবেল বলে ,কেননা অনুগ্রহেই, বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ্বরেরই দান; তাহা কর্মের ফল নয়, যেন কেহ শ্লাঘা না করে। (ইফি ২: ৮, ৯ পদ)
    তাহলে প্রকৃত খ্রীষ্টিয়ান কে ? সেই প্রকৃত খ্রীষ্টিয়ান যিনি যীশুর  জীবনকে অনুসরণ করেন, একমাত্র ত্রাণকর্তা রূপে তার প্রতিটি আদেশকে পালন করার জন্য প্রাণপণ করেন , যার সঙ্গে যীশুর সঠিক আতিœক স¤পর্ক আছে  । আমাদের মনে রাখা দরকার যে ,  খ্রীষ্টিয়ান  মানে কোন ধর্ম পালন নয় কিন্তু যীশুর সঙ্গে নিবিড় স¤পর্কের  ব্যাপার ।আসুন ফিরে আসি লুদিয়ার বিষয়ে , লুদিয়া একজন প্রকৃত বিশ্বাসী ছিলেন । কারন তিনি যে শুধু হৃদয় খুলে দিলেন তাই নয় তার ঘর খুলে দিলেন ।
    লুদিয়া ঘর খুলে দিলেন
    বাপ্তিস্ম নেবার পর লুদিয়া প্রেরিত পৌলকে  একটি প্রস্তাব দিলেন যেন, তার বাড়িতে অতিথি হন । এখানে লুদিয়া হৃদয় খুলে দেওয়া টাকে যথেষ্ট মনে করলেন না , তাই তিনি তার বসবাসের ঘর  খুলে দিলেন । কেন ? 
    প্রথমত ঃ তিনি যীশু এবং পৌল ও তার সঙ্গীদের  প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন, দ্বিতীয়ত ঃ  তিনি বুঝলেন তার জীবনের সাথে  ঘর একটি গুরুত্বপূর্ণ  স¤পর্কযুক্ত বিষয় সুতারং সুসমাচারের কাজে  প্রভু ঘরকেও  ব্যাবহার করতে পারেন । সম্ভবত তিনি পৌলের সঙ্গে আলোচনার সময় বুঝে ছিলেন যে , সুসমাচার প্রচার করতে গিয়ে পৌল ও তার বন্ধুদের নির্দিষ্ট কোন থাকা বা খাবারের নিশ্চয়তা নেই , তাই তিনি তাদেরকে জোড়া-জুড়ি করে নিয়ে গেল তার ঘরে ।এই ধরনের প্রেমের  চিন্তা শুধু  পবিত্র আতœা দ্বারা সম্ভব ।
    বাইবেলও কিন্তু এই লুদিয়ার ঘর খুলে দেবার বিষয়টি খুব জোরালো ভাবে সমর্থন করে । প্রেরিতদের সময়ে যে সব মন্ডলী স্বীকৃতি পেয়েছিল সেই মন্ডলী গুলোকে  গৃহস্থিত মন্ডলি বলা হয় । অর্থাৎ বিশ্বাসীদের ঘরে ঘরে মন্ডলীর কার্যক্রম পরিচালিত হত । তারমানে এখনকার সময়ে যে চার্চ বিল্ডিং দেখি মন্ডলী পরিচালনার জন্য এইরকম কোন বিল্ডিং বা বাড়ি তখন  ছিল না । আসুন , দেখি বাইবেলের  কয়েকটি  স্থানে  যেখানে গৃহস্থিত মন্ডলির কথা বলা হয়েছে  ।
     ফিলিমন- ১: ২ পদ , “ আমাদের প্রেম-পাত্র ও সহকারী ফিলীমন, আপ্পিয়া ভগিনী ও আমাদের সহসেনা আর্খিপ্প এবং তোমার গৃহস্থিত মন্ডলী সমীপে ।
    ( কলসিয়  ৪:১৫ পদ) তোমরা লায়দিকেয়া-নিবাসী ভ্রাতৃগণকে, এবং নুম্ফাকে ও তাঁহার গৃহস্থিত মন্ডলীকে মঙ্গলবাদ কর”। (রোমিয় ১৬ :৫ পদ)  “আর তাঁহাদের গৃহস্থিত মন্ডলীকেও মঙ্গলবাদ কর”।
    ১ করি ১৬:১৯ পদ এশিয়ার মন্ডলী সকল তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছে। আক্কিলা ও প্রিষ্কা এবং তাঁহাদের গৃহস্থিত মন্ডলী তোমাদিগকে প্রভুতে অনেক মঙ্গলবাদ করিতেছেন। আরও বেশ কিছু জায়গায় গৃহস্থিত মন্ডলীর  কথা উলে¬খ আছে । প্রেরিতদের সময়ে   বিশ্বাসীদের ঘর শুধু পরিবার কেন্দ্রিক ছিলনা কিন্তু মন্ডলির কাজেও ব্যবহার করা হত । গৃহস্থিত মন্ডলীতে  প্রভুর ভোজ , শিক্ষা, সহভাগিতা ও প্রার্থনা  হত (প্রেরিত ২ঃ ৪২ পদ)।
    ঘয়তোবা লুদিয়া গৃহস্থিত মন্ডলীর কথা জানত না, কিন্তু ঈশ্বর তার হৃদয়ে নিজের ঘরকে মন্ডলীর কাজে  ও সুসমাচার প্রচারকদের উদ্দেশে  ব্যবহার করার জন্য অনুপ্রেরণা  যুগিয়েছিলেন।লুদিয়া বুঝেছিলেন যে , পরিত্রান পাবার পূর্বে তার ঘর শুধু মাত্র একান্ত নিজের ছিল কিন্তু পরিত্রানের পরে তার সব কিছু শুধু তার নয় কিন্তু সব কিছুই ঈশ্বরের  জন্য। এই উপলব্ধিটাও পবিত্র আতœা থেকেই আসে । খেয়াল করে দেখুন ,অনেক মন্ডলীর সদস্যরা তাদের হৃদয় প্রভুকে দেয় আর বাদবাকী নিজেদের কাছে রাখে । যেমন, করে বলে  থাকে , প্রভু এই আমি তোমার , কিন্তু  ঘর আমার ব্যক্তিগত । অনেকের শিক্ষার অভাব থাকতে পারে তবে লুদিয়াকে তার ঘর ব্যাবহারে সাধু পৌল কোন উৎসাহিত করেনি । আপনি যদি পরিত্রান পেয়ে থাকেন , তাহলে স্বার্থপরতা থেকেও পরিত্রান পেয়ে যাবেন । শুধু ঘর বা পরিবারের বেলায় নয় , সব কিছুতে আপনার নিজের বলে কিছুই থাকবেনা । আপনার অর্থ , স¤পত্তি  যা কিছু আছে সব কিছু প্রভুর । এটা সহজ ব্যাপার  নয় কিন্তু খ্রীষ্টের জন্য  আতœত্যাগ ।
     বাইবেলে কয়েকটি সুন্দর গল্প আছে । এর মধ্যে এই গল্পটি পড়লে আরো পরিস্কার ভাবে বোঝা যায় আসলে  আতœত্যাগ বলতে কি বুঝায় (মথি ১৯ : ১৬-২২  পদ)  
    আর দেখ, এক ব্যক্তি আসিয়া তাঁহাকে বলিল, হে গুরু, অনন্ত জীবন পাইবার জন্য আমি কিরূপ সৎকর্ম করিব? তিনি তাহাকে কহিলেন, আমাকে সৎ এর বিষয় কেন জিজ্ঞাসা কর? সৎ একজন মাত্র আছেন । কিন্তু তুমি যদি জীবনে প্রবেশ করিতে ইচ্ছা কর, তবে আজ্ঞা সকল পালন কর। সে কহিল, কোন্ কোন্ আজ্ঞা? যীশু বলিলেন, এই এই , নরহত্যা করিও না, ব্যভিচার করিও না, চুরি করিও না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না, পিতা ও মাতাকে সমাদর করিও, এবং তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিও”।  সেই যুবক  তাঁহাকে কহিল, আমি এই সকলই পালন করিয়াছি, এখন আমার কি ক্রুটি আছে? যীশু তাহাকে কহিলেন, যদি সিদ্ধ হইতে ইচ্ছা কর, তবে চলিয়া যাও, তোমার যাহা যাহা আছে, বিক্রয় কর, এবং দরিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাৎগামী হও। কিন্তু এই কথা শুনিয়া সেই যুবক দুঃখিত হইয়া চলিয়া গেল, কারণ তাহার বিস্তর সমপত্তি ছিল”।  এই যুবকটির দুর্বলতার জায়গাটিতে  যীশু চ্যালেঞ্জ দিলেন কিন্তু যুবকটি হেরে গেলেন ।
    এই গল্পের মাঝে  একটা গভীর শিক্ষার বিষয় আছে ,আর তা হল - পৃথিবীর কোন কিছুকেই আমদের জীবনে প্রধান স্থান দিতে পারিনা একমাত্র যীশুকেই আমদের জীবনে প্রধান স্থানটি ছেড়ে দিতে হবে , প্রভুর জন্য আমাদের সব কিছু ত্যাগ করার মনোভাব থাকা উচিত  । খ্রীষ্টিয়  জীবন কষ্টের জীবন ,  আতœত্যাগের জীবন । যীশু বলছেন, “সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ কর; কেননা সর্বনাশে যাইবার দ্বার প্রশস্ত ও পথ পরিসর, এবং অনেকেই তাহা দিয়া প্রবেশ করে; কেননা জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, এবং অল্প লোকেই তাহা পায় ;।( মথি ৭ :১৩- ১৪ পদ) 
    তিনি পুনর্বার আবার বললেন , “বাস্তবিক অনেকে আহূত, কিন্তু অল্পই মনোনীত ; (মথি ২২: ১৪ পদ) অনেক পালকগন তাদের প্রচারের সময় খ্রীষ্টিয় জীবনের আতœত্যাগ বা ক্রুশ বহন নিয়ে প্রচার করেন না । বরং জাগতিক লাভের বিষয়ে প্রচারের মধ্যে দিয়ে বিভ্রান্তি জন্মায় । আমি বলি এই ধরনের প্রচার যীশুর শিক্ষার পরিপন্থী । এটা পাপ ।
    আমাদের নিশ্চয় মনে আছে যে যীশু পবিত্র আতœার  মাধ্যমে জন্ম নিলেও  তিনি একটি পরিবার ও ঘরে  বড় হয়েছেন । এবং তার পরিচর্যার সময়ে তিনি বিভিন্ন পরিবারের নিমন্ত্রণে  অতিথি হয়েছেন , অলৌকিক কাজ করেছেন , শিক্ষা দিয়েছেন । জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলি তিনি করেছেন এই ঘরের মাঝে , শিষ্যদের পা ধোয়ান , প্রভুর ভোজ সহ  আরো অনেক কাজ । একজন বিশ্বাসীর ঘর খুবই গুরুত্বপূর্ণ  বিষয় । যেখানে মন্ডলীর উপাসনা , সুসমাচার প্রচারের কাজ , শিষ্য গঠনের কাজ , শিক্ষা দেওয়া ছাড়া অনেক আতিœক পরিচর্যা করা যায় ।
     (ইব্রীয় ১৩ :১ পদ ) লেখা আছে  “তোমরা অতিথী সেবা ভুলে যেওনা  কারন বিশ্বাসীর ঘর শুধু ঘর বা বাড়ি নয় ,একটি পরিচর্যা কেন্দ্র । লুদিয়া তার গৃহ প্রভুর জন্য খুলে দিয়ে  ইউরোপে  প্রভুর রাজ্য বিস্তারে বিশেষ ভুমিকা রেখে ছিলেন ।ইতিহাসবিদেরা বলেছেন লুদিয়ার ঘরে  একটি গৃহস্থিত মন্ডলী স্থাপিত হয়েছিল । আপনি কি আপনার ঘর প্রভুর জন্য খুলে দেবেন ?  ঘর ছোট কি বড় সেটা গুরুত্বপূর্ণ না , আপনার প্রভুর প্রতি মনোভাবই গুরুত্বপূর্ণ ।
    লুদিয়া তার অর্থের ভান্ডার খুলে দিলেন
    লুদিয়া যীশুর জন্য হৃদয় খুলে দিল , ঘর খুলে দিল এবার তিনি মানিব্যাগ ও খুলে দিলেন । কিভাবে হল , পৌল তার বন্ধুরা যখন লুদিয়ার বাড়িতে অতিথি  হলেন তখন অনেকদিন সেখানে ছিলেন । তো একটা বাড়িতে কয়েকজন  অতিথি বেশ কিছদিন ধরে থাকেন , নিশ্চয় সেই আপ্যায়নকারীর পরিবারে খরচের ব্যপারটা চলে  আসে । লুদিয়া একজন ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি নিশ্চয় হিসাবটা পূর্বে থেকেই জানতেন । জেনেশুনে তিনি তাদেরকে আমন্ত্রন দিয়েছিলেন ।  লুদিয়ার জীবনে যীশুর  আগমনে সব কিছু বদলে দিল । বদলে গেল হিসাব নিকাশ। তিনি অর্থের দিকে তাকালেন না কিন্তু তার দৃষ্টি ছিল যীশুর দিকে । তিনি এটা বুঝতে সক্ষম হলেন যে, আমার  যা কিছু আছে সবই ঈশ্বরের । আপনাদের মনে আছে , প্রেরিতদের আমলে  সকল বিশ্বাসীগন তাদের অর্থ স¤পদ মন্ডলীতে এনে রাখতেন , নিজেদের জন্য  কিছু রাখতেন না ।কিন্তু  এখনকার  বাস্তবতা  হল ঘরের দরজা তো দূরে থাক  প্রভুর জন্য মানিব্যাগ ও আমরা খুলতে চাইনা , দান -দশমাংশ , অগ্রিমাংশ ,উপহার দিতে কার্পণ্য করে থাকি ।  মন্ডলীর ভান্ডারের ব্যাপারে  উদাসীনতা দেখাই , এটা  সত্যি লজ্জা ও অসম্মান জনক, প্রভুকে আমরা ঠকাচ্ছি । প্রভু বলছেন  তার ঘর  যেন  অপূর্ণ না থাকে । এ কারনে বিশেষ করে বাংলাদেশের  বেশীরভাগ মন্ডলী গুলি স্বাবলম্বী হতে পারে নাই ।
    ঈশ্বরকে অসম্মান করলে আশীর্বাদ আসবে কি ভাবে , এটা যেমন মন্ডলীর  জন্য প্রযোজ্য  ঠিক  তেমনি পরিবারের জন্য ও প্রয়োজ্য । বাইবেল বলে , মনুষ্য কি ঈশ্বরকে ঠকাইবে? তোমরা ত আমাকে ঠকাইয়া থাক। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, কিসে তোমাকে ঠকাইয়াছি? দশমাংশে ও উপহারে। তোমরা অভিশাপে শাপগ্রস্থ; হাঁ, তোমরা, এই সমস্ত জাতি, আমাকেই ঠকাইতেছ। তোমরা সমস্ত দশমাংশ ভান্ডারে আন, যেন আমার গৃহে খাদ্য থাকে; আর তোমরা ইহাতে আমার পরীক্ষা কর, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, আমি আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করিয়া তোমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্বাদ বর্ষণ করি কি না। (১ মালাখি ৩: ৮, ৯ পদ )
    পুরাতন নিয়মের এই শিক্ষা নিয়ে যদি আমদের  আপত্তি থাকে তবে নতুন নিয়মে  দান করা নিয়ে একটা ভাল উদাহরণ আছে , একজন বিধবার গল্পে (মার্ক ১২ : ৪১ -৪৪ পদ) আর তিনি ভান্ডারের সম্মুখে বসিয়া, লোকেরা ভান্ডারের মধ্যে কিরূপে মুদ্রা রাখিতেছে, তাহা দেখিতেছিলেন । 
    তখন অনেক ধনবান তাহার মধ্যে বিস্তর  মুদ্রা রাখিল । পরে একটি দরিদ্র বিধবা আসিয়া দুইটি ক্ষুদ্র মুদ্রা তাহাতে  রাখিল, যাহার মূল্য সিকি পয়সা । তখন তিনি আপন শিষ্যগণকে কাছে ডাকিয়া কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, ভান্ডারে যাহারা মুদ্রা রাখিতেছে, তাহাদের সকলের অপেক্ষা এই দরিদ্র বিধবা অধিক রাখিল; কেননা অন্য সকলে আপন আপন অতিরিক্ত ধন হইতে কিছু কিছু রাখিয়াছে, কিন্তু এ অনটনে থাকিয়াও যাহা কিছু ছিল, সমস্ত জীবনোপায় রাখিল ।এখানে যীশু ঐ দরিদ্র বিধবার দানকে প্রশংসা করে আমাদেরকে প্রভুর জন্য  একশত ভাগ দেবার  ইচ্ছা থাকার কথাই বললেন ।
    লুদিয়া একজন নতুন বিশ্বাসী হয়ে যে  উদারতার সাথে কাজটি করলেন ,  যারা  অনেক বছর ধরে মন্ডলীতে যাতায়াত করছেন , অনেক বাইবেলের  সত্য জানেন  এমন অনেকেই   প্রভুর কাজের জন্য  আনন্দের সাথে উপহার দিতে  দ্বিধাদন্ধে ভোগেন ।একটি  আতিœক দুর্বল বিশ্বাসীর অন্যতম লক্ষন হল  তিনি প্রভুর জন্য  যত টুকু দেওয়া উচিত তা দেন না বরং সব ধরনের আশীর্বাদের জন্য প্রভুর কাছে আবদার করেন , এটা মূর্খতার সামিল । যেমন লেখা আছে  , কিন্তু আমি বলি এই, যে অল্প পরিমাণে বীজ বুনে, সে অল্প পরিমাণে শস্যও  কাটিবে; আর যে ব্যক্তি আশীর্বাদের সহিত বীজ বুনে, সে আশীর্বাদের সহিত শস্যও কাটিবে। প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউক; কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভালবাসেন। (২ করি ৯ : ৬-৭ পদ)  আপনি যদি নতুন জন্ম পেয়ে থাকেন তাহলে প্রভু আপনাকে এই চিন্তা দেবেন যেন মন্ডলী ও পরিচর্যায় কোন অভাব দেখা না যায় । 
    বাইবেল বলে ( প্রেরিত ২০ :৩৫ পদ)  গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয় ।   সাধু পৌল ও তার সঙ্গীদের প্রচার কাজে লুদিয়ার এই অবদানকে  মূল্যায়ন করা বেশ কঠিন কাজ না ,অন্ততঃ  তাদের কাছে যারা বিভিন্ন স্থানে স্থানে প্রচারের কাজ করছেন । কারন হল একটু খাওয়া ও থাকবার জায়গা  প্রচারের কাজে অনেক খানি উৎসাহ ও  প্রেরনা  জোগায় । বাইবেলে  অনেক স্থানে  এই বিষয়ের   শিক্ষার কথা  দৃঢ় ভাবে বলছেন ,এখানে কয়েকটি পদ উলে¬খ করা হল । কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের বাক্যের বিষয়ে শিক্ষা পায়, সে শিক্ষককে সমস্ত উত্তম বিষয়ে সহভাগী করুক (গালাতীয় ৬ : ৬ পদ )।
    যে প্রাচীনেরা উত্তমরূপে শাসন করেন, বিশেষতঃ যাঁহারা বাক্যে ও শিক্ষাদানে পরিশ্রম করেন, তাঁহারা দ্বিগুণ সমাদরের যোগ্য গণিত হউন। কারণ শাস্ত্রে বলে,শস্যমর্দনকারী বলদের মুখে জাল্তি বাঁধিও না;” আর, “কার্যকারী আপন বেতনের যোগ্য”( ১ম তিমথিয় ৫ : ১৮ পদ)।  
    এইরূপে প্রভু সুসমাচার প্রচারকদের জন্য এই বিধান করিয়াছেন যে, তাহাদের উপজীবিকা সুসমাচার হইতে হইবে  (১ম করি ৯ : ১৪ পদ) সুতারং লুদিয়া তার মানি ব্যাগ খুলে  দিয়ে প্রমান করছেন  যে তিনি প্রকৃত বিশ্বাসী ।
    আজকাল এসব বিষয় নিয়ে শিক্ষা দিতে গেলে অনেকেই এর অর্থকে ভিন্ন ভাবে দেখে । ভেবে থাকেন  পরিচর্যাকারীর বেতন তো আসবে বিদেশ থেকে , এটা তাদের  দায়িত্ব আমাদের নয় । আমাদের মনে রাখা দরকার যে , বিদেশী সাহায্য সাময়িক হতে পারে কন্তু চিরদিনের জন্য না । লুদিয়ার  এই যে ত্যাগ স্বীকার প্রমান করে যে , ধনের প্রতি তার কোন আসক্তি ছিল না । আসক্তি থাকলে কেঊ নিঃস্বার্থ  ভাবে অতিথি সেবা করতে পারেনা   কারন তার অর্থ স¤পত্তি উপরে মায়া থাকে । এবং ধনাসক্তি সকল মন্দের মুল । অর্থ উপার্জনে কোন পাপ নেই যদি সেখানে এক নম্বরে ঈশ্বর থাকেন এবং  সেখানে কোন আসক্তি না থাকে । সময়ের বেড়াজালে  পরে অনেকেই আজ ঈশ্বরকে প্রথমে রাখেন না , টাকা হল তাদের প্রথম ঈশ্বর । এটা শুধু বাক্তি গত সমস্যা না , মন্ডলিতে এখন দেখা যায় ।যীশু  পর্বত দত্ত উপদেশে বলেছেন  যে তোমরা জগতে ধন সঞ্চয়  কোরনা কিন্তু স্বর্গে ধন সঞ্চয় কর ।( মথি ৬ : ১৯ ২০ পদ) কারন আপনি যেমন এই জগতে স্থায়ী না ,তেমনি ধন ও । 
    লুদিয়ার এই ঘটনা আমাদের জীবনে অনেক নিরাময় শিক্ষা দেয় । যীশু খ্রীষ্টৈর কবর খুলে গেল আর মৃত্যু পরাজিত হল । লুদিয়ার  হৃদয় খুলে গেল সেই সাথে খুলে গেল একের পর এক আশীর্বাদের দরজা । একই ভাবে , যদি আমাদের হৃদয় ,  আমার ঘরের  দরজা ও অর্থের ভান্ডর প্রভুর জন্য খুলে দেই ,তবে আমাদের মহান যীশু তার দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে প্রচুর আশীর্বাদ করবেন ।  

    এই আশীর্বাদ শুধু আপনি বা আপনার পরিবার নয় কিন্তু মন্ডলীতে ও আমাদের খ্রীষ্টিয় সমাজে অযাচিত ভাবে ছড়িয়ে পড়বে । আমেন ।

    খুলে দেও-জেমস জীপু রায় 



    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS