“পবিত্র শাস্ত্রের প্রত্যেকটি কথা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে এবং তা শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধন এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারী।” {২ তীমথিয় ৩:১৬}
১৫০০ বছরের ও বেশী সময় ধরে ৪০ জন লেখক এই বাইবেল লিখেছিলেন। এবং এই বাইবেল লেখার কাজ পরিচালনা করেছিলেন পবিত্র আত্মা:
“নবীরা তাঁদের ইচ্ছামত কোন কথা বলেন নি; পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়েই তাঁরা ঈশ্বরের দেওয়া কথা বলেছিলেন।“ {২ পিতর ১:২১}
পবিত্র বাইবেলের প্রধান দুটি অংশ পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়ম। পুরাতন নিয়মের অধিকাংশ পুস্তক হিব্রু ভাষায় লেখা হয়েছে। দানিয়েল ও ইষ্রার কিছু অংশ অরামীয় ভাষায় লেখা হয়েছে। নতুন নিয়মের সব পুস্তকই গ্রীক ভাষায় লেখা হয়েছে। বাইবেল হল ৬৬ টি পুস্তকের একটি সংকলন।
*পুরাতন নিয়ম: পুরাতন নিয়মের পুস্তক সংখ্যা হল ৩৯ টি। এই পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলোকে প্রধানত ৪ ভাগে ভাগ করা যায়।
১। ব্যবস্থা পুস্তক
২। ঐতিহাসিক পুস্তক
৩। কাব্যিক পুস্তক
৪।নবীদের পুস্তক
১। ব্যবস্থা পুস্তক (৫ টি)
আদিপুস্তক
যাত্রাপুস্তক
লেবীয় পুস্তক
গণনা পুস্তক
দ্বিতীয় বিবরণ
যিহোশূয়
বিচারকর্তৃগণের বিবরণ
রুতের বিবরণ
১ শমূয়েল
২ শমূয়েল
১ রাজাবলি
২ রাজাবলি
১ বংশাবলি
২ বংশাবলি
ইষ্রা
নহিমিয়
ইষ্টের
ইয়োব
গীতসংহিতা
হিতোপদেশ
উপদেশক
পরমগীত
যিশাইয়
যিরমিয়
বিলাপ
যিহিস্কেল
দানিয়েল
হোশেয়
যোয়েল
আমোষ
ওবেদিয়
যোনা
মীখা
নহুম
হবক্কূক
সফনিয়
হগয়
সখরিয়
মালাখী
১। সুসমাচার।
২। প্রেরিত গণের কার্যাবলী
৩। পৌলের চিঠি
৪। অন্যান্য শিষ্যদের চিঠি
৫। ভাববাণী পুস্তক
মথি
মার্ক
লূক
যোহন
প্রেরিত্
রোমীয়
১ করিন্থীয়
২ করিন্থীয়
গালাতীয়
ইফিষীয়
ফিলীপীয়
কলসীয়
১ থিষলনীকীয়
২ থিষলনীকীয়
১ তীমথিয়
২ তীমথিয়
তীত
ফিলীমন
ইব্রীয়
যাকোব
১ পিতর
২ পিতর
১ যোহন
২ যোহন
৩ যোহন
যিহুদা
প্রকাশিত বাক্য
১৩০০ খ্রীষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের জন ওয়াইক্লিফ সর্বপ্রথম ইংরেজীতে পবিত্র বাইবেল অনুবাদ করেন। তিনি সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেছিলেন বলে ধর্মীয় নেতারা তাকে নির্যাতন করেছিলেন।
পৃথিবীর সর্বপ্রথম মুদ্রিত বাইবেল হল গুটেনবার্গ বাইবেল।
পবিত্র বাইবেল হলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন বই। সাধারণত কোন বইয়ের প্রাচীন হওয়ার সুযোগ থাকে না। উহারা অনেক ভঙ্গুর। আগুন তাদের পুড়িয়ে ফেলে, পানি তাদের বিলুপ্ত করে দেয়, পোকা-মাকড় তাদের খেয়ে ফেলে এবং অসতর্ক আঙ্গুল তাদের ছিঁড়ে ফেলে। বাইবেল সম্পূর্ণভাবে প্রায় দুই হাজার বছরের পুরাতন। এর কিছু অংশ দুগুন বেশী সময়ের। পৃথিবী অন্যকোন পুস্তকের সাথে এবর তুলনা করা যাবে না। বাইবেলের এই বয়সই এর স্থায়িত্বকাল এবং অবিনশ্বতার প্রকাশ করে। বাইবেল হলা একটি মহাগ্রন্থ।
বাইবেলকে মানুষের দ্বারা একের পর এক ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়েছে। বাইবেলের জন্য অনেক মানুষকে নির্যাতন ও মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিলো। ধর্ম পুস্তকের জন্য এত মানুষের নির্যাতন ও মৃত্যুবরণের ঘটনা অন্য কোন ধর্ম পুস্তকের ক্ষেত্রে ঘটেনি।
পৃথিবীতে যাতে এই পবিত্র বাইবেল না থাকে এই জন্য রোমের সম্রাট ডায়োক্লিসিয়ান ঘোষণা দিলেন যে, যার ঘরে এই পবিত্র বাইবেল পাওয়া যাবে তাকে হত্যা করা হবে। তাই যাদের কাছে পবিত্র বাইবেল ছিল তারা নিজ নিজ পবিত্র বাইবেল সম্রাটের কাছে জমা দিয়ে দিল।আর যার কাছে এই পবিত্র বাইবেল আছে এই সংবাদ যে না দেবে তাকে হত্যা করা হবে। এমনি ভাবেই তিনি পবিত্র বাইবেল নিশ্চিহ্ন করতে চাইলেন। তার হাতে যে বাইবেল গুলো এসেছিলো তিনি তার সব পুড়িয়ে দিলেন। এবং মনে করলেন আর পবিত্র বাইবেল নেই।
এর এক শতাব্দী পরে সম্রাট কনস্টাইন যখন প্রভু যীশুকে গ্রহণ করলেন তখন তিনি ঘোষণা দিলেন যে ২৪ ঘন্টার মধ্যে যে তাকে একখানা বাইবেল এনে দিতে পারবে তাকে ভালো পুরস্কার দেয়া হবে। ঘটনা এমন ঘটলো যে ৫০ টি পবিত্র বাইবেল এসে গেলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে।
একজন নাস্তিক ভন্টেয়ার দার্শনিক বলেছিলেন যে খ্রীষ্ট ধর্ম শেষ হয়ে যাবে কিন্তু এই আজ তার নিজের বাড়ি যেখানে তিনি থাকতেন সেটি বাইবেল সোসাইটির বিরাট অফিস। সেখান থেকে হাজার হাজার পবিত্র বাইবেল ও লক্ষ লক্ষ পুস্তিকা বের হচ্ছে সেগুলো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে।
তাই একথা স্বীকার করতে হয় যে বাইবেলকে কখনও ধ্বংশ ও বিলুপ্ত করা সম্ভব নয়। যা কিনা প্রমাণিত হয়েছে। ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল হলো অবিনশ্বর। বাইবেলে তাই একথা লেখা আছে:
“ঘাস শুকিয়ে যায়, আর ফুলও ঝড়ে যায়, কিন্তু প্রভুর বাক্য চিরকাল থাকে।“ {১ পিতর ২৪-২৫}
বাইবেল হলো একজন মানুষের চলার পথের প্রদীপের মত। গীতসংহিতা পুস্তকে লেখা আছে:
“প্রভু, তোমার বাক্যগুলো প্রদীপের মত আমার পথকে আলোকিত করে।“ {গীতসংহিতা ১১৯:১০৫}
বাইবেল হল একমাত্র গ্রন্থ যা মানুষকে অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথে আনতে পারে। অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষ যদি বাইবেলে সংস্পর্শে আসে তবে তার জীবন আলোয় আলোকিত হবে। এবং সে জীবনে চলার সঠিক পথ খুঁজে পাবে।
সাধু সুন্দর সিং বলেছেন, “বাইবেল জগতের জন্য ঈশ্বরের প্রেমপত্র।“
বিখ্যাত যোদ্ধা নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছেন, “বাইবেল কেবল মাত্র একটি বই নয় কিন্তু একটি জীবন্ত সৃষ্টি, যা শক্তি সমৃদ্ধ যে কেই বাঁধা দেবে সে পরাজিত হবে।
এবং বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেছেন, “জাগতিক অন্য যে কোন ইতিহাসের চেয়ে বাইবেল যে অধিকতর বিশ্বাস যোগ্য তার অনেক নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে।“
তাই আসুন আমরা প্রতিদিন বাইবেল অধ্যয়ণ করি। সাধু পৌল তাঁর তীমথীয় পুস্তকে মহামূল্যবান একটি কথা বলেছেন:
“ছেলেবেলা থেকে তুমি পবিত্র শাস্ত্র থেকে শিক্ষা লাভ করেছ। আর পবিত্র শাস্ত্রই তোমাকে খ্রীষ্ট যীশুর উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জ্ঞান দিতে পারে।“ {২তীমথীয় ৩:১৫}
বাইবেলের শেষ পুস্তক প্রকাশিত বাক্যে লেখা আছে:
“ঈশ্বরের বাক্য যা এখানে লেখা হয়েছে, যে তা পড়ে সে ধন্য এবং যে তা শোনে ও পালন করে সেও ধন্য, কারন সময় কাছে এসে গেছে।“ {প্রকাশিত বাক্য ১:৩}
প্রকাশিত বাক্য ১:৩ পদের শেষে বলা হয়েছে সময় কাছে এসে গেছে, অতএব বন্ধুরা বাইবেল পড়ুন, বাইবেল পড়া শুনুন ও বাইবেলের লেখা কথাগুলি পালন করুন, তবেই আপনি অনন্ত জীবন পাবেন।