যীশুর মৃত্যুদন্ড কিভাবে দেওয়া হয়?

ads20

    যীশু চাইলে নিজেকে সৈন্যদের হাত থেকে বাঁচাতে পারত কিন্তু তিনি আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করবার জন্য নিজেকে সৈন্যদের হাতে তুলে দিলেন। সৈন্যরা যীশুকে ধরে মহাপুরোহিতের বাড়ীতে নিয়ে গেল। পিতর তাদের পিছনে পিছনে গেলেন।

    সেই বাড়ীর উঠানে সৈন্যরা আগুনের চারপাশে দাড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছিল। পিতরও তাদের সঙ্গে আগুন পোহাতে লাগলেন। ঐ বাড়ীর এক কাজের মহিলা সেখান দিয়ে যাবার সময় পিতরকে দেখতে পেল। সে বলল, ‘আপনি তো নাসরতের যীশুর সঙ্গে ছিলেন।’ কিন্তু পিতর তা অস্বীকার করে সেখান থেকে সরে গেলেন। তখন সেই মহিলাটি অন্যদের বলল, ‘এই লোকটি যীশুর একজন শিষ্য।’ জবাবে পিতর বললেন, ‘না, তুমি ভুল বলছ। আমি তাঁর শিষ্য নই।’ তার একটু পরেই কেউ পিতরকে গালীলীয় ভাষায় কিছু বলতে শুনল। সে পিতরকে বলল, ‘আপনি তো গালীলীয়, আপনি নিশ্চয় যীশুকে চেনেন।’ পিতর ভয়ে ঘেমে উত্তর দিল, ‘আমি প্রতিজ্ঞা করে বলছি, আমি তাঁকে চিনি না।’ এরপরই একটি মোরগ ডেকে উঠল এবং যীশু যে কথা বলেছিলেন তা পিতরের মনে পড়ল। তখন তিনি বুক চাপড়ে কাঁদতে লাগলেন।

    ঘরের ভেতরে যিহুদীদের মহাসভা তখন যীশুর বিচার করছিল। মহাপুরোহিতের চাকর যখন সবাইকে একত্র হবার জন্য ডাকছিল তখনও ভোর হয় নি। তারা একটা ন্যায়বিচারের ভাণ করে যীশুকে মৃত্যুদন্ড নিতে চাইছিল। সেজন্য তারা অনেক সাক্ষী যোগাড় করল বটে কিন্তু তাদের একজনের সাক্ষ্য আরেকজনের সঙ্গে মিলল না। শেষে মহাপুরোহিত যীশুকে প্রশ্ন করলেন। তোমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দিচ্ছে কেন তুমি সে ব্যাপারে কোন কথা বলছ না? কিন্তু যীশু কোন কথা বললেন না।

    এরপর মহাপুরোহিত তাঁকে প্রতিজ্ঞা করে বলতে বললেন যে, তিনি রাজা, অর্থাৎ ঈশ্বরের পুত্র কিনা। উত্তরে যীশু বললেন, ‘হ্যাঁ, আমিই সেই। আপনারা আমাকে ঈশ্বরের ডান পাশে বসে থাকতে এবং মেঘে করে আসতে দেখবেন।’ মহাপুরোহিত সবাইকে বললেন, ‘আপনারা সকলে তাঁকে নিজের মুখেই এসব কথা বলতে শুনলেন। আমাদের আর কোন সাক্ষ্যের দরকার নেই। সে নিজেকে ঈশ্বরের সমান করে তুলেছে এবং এটি ঈশ্বরের অপমান করার সমান। আপনারা কি তাঁর দোষ দেখতে পাচ্ছেন না?’ লোকেরা চিৎকার করে বলল, ‘হ্যাঁ, সে দোষী।’ তখন তারা তাঁকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিল। কিন্তু এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হলে রোমীয় শাসনকর্তার আদেশ নিয়ে তা করতে হবে। তাই খুব সকালে তারা যীশুকে পন্তীয় পিলাতের কাছে নিয়ে গেল।

    যীশু রোমীয় শাসনকর্তা পন্তীয় পিলাতের সামনে দাঁড়ালেন। যিহুদী পুরোহিতেরা পিলাতের কাছে তাঁকে রাজদ্রোহী হিসাবে দোষী করল কারণ তারা জানত যে, যদি তারা তাঁকে নিষ্পাপ হিসাবে অভিযুক্ত করে তবে রাজা তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেবে না। তারা বলল, ‘সে নিজেকে রাজা বলে দাবী করে।’ তাই পিলাত যীশুকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলেন। কিন্তু তিনি যীশুকে মৃত্যুদন্ড দেবার মত কোন দোষ খুঁজে পেলেন না কারণ যীশু কোন অন্যায় করেন নি। সেই সময়টি ছিল উদ্ধার-পর্বের সময় আর তখন একজন বন্দিকে মুক্ত করে দেবার দেবার নিয়ম ছিল। সেজন্য পিলাত বললেন, ‘আমিই এই লোকটির কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছি না। তাই আমি তাঁকে ছেড়ে দিচ্ছি।’


    কিন্তু পুরোহিতদের ষড়যন্ত্রকারী লোকেরা পিলাতকে তা করতে নিষেধ করল। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘যীশুকে মেরে ফেলুন! ওকে ক্রুশে দিন! বারাব্বাকে মুক্তি দিন। (বারাব্বা ছিল একজন খুনি)।’ তারা চিৎকার করতে করতে এমন গোলমালের সৃষ্টি করল যে, শেষে পিলাত যীশুকে মৃত্যুদন্ড দিলেন। তিনি জানতেন যে, তিনি ভুল করছেন। কিন্তু তিনি ভয় পেয়েছিলেন এই কথা ভেবে যে, এতে হয়ত দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হতে পারে আর সম্রাটের কাছে তার বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে পারে। পিলাত বললেন, ‘আমি এই মানুষটির মৃত্যুর জন্য দায়ী নই। আপনারাই এজন্য দায়ী থাকবেন।’ তারপর তিনি যীশুকে ক্রুশে টাঙ্গিয়ে মেরে ফেরবার জন্য সৈন্যদের হাতে ছেড়ে দিলেন। ক্রুশের মৃত্যু ছিল ধীরে ধীরে কঠিন যন্ত্রণা পেয়ে মারা যাওয়া। রোমীয়রা দোষী লোকদের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা রেখেছিল। সৈন্যরা যীশুকে নিয়ে গেল। তারা যীশুকে নিয়ে গিয়ে রাজা হিসাবে বেগুনে কাপড় পরাল এবং তাঁর মাথায় একটি কাঁটা দিয়ে মুকুট বানিয়ে পরিয়ে তাঁর সঙ্গে ঠাট্টা-তামাশা করল। তারা তাঁর মুখে আঘাত করল। এরপর তারা তাঁর শরীর থেকে সেই কাপড় খুলে ফেলে ক্রুশে দেবার জন্য শহরের রাস্তা দিয়ে গলগথায় নিয়ে গেল। আমরা অনেক সময় জাগতিক মায়ার কারণে আমাদের প্রতি যীশুর যে বলিদান তা আমরা ভুলে যাই।


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS