শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মহিয়সী নারী মাদার তেরেসা

ads20

     শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মহিয়সী নারী, দুস্থ, দরিদ্র, অসহায়, অবহেলিত মানুষের ত্রাণকর্ত্রী মাদার তেরেসা ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট ম্যাসেডোনিয়ার রাজধানী স্কোপিয়োতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান। তাঁদের আদি নিবাস ছিল আলবেনিয়ায়। তাঁর পিতা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯১৯ সালে মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর পিতৃবিয়োগ হয়। পিতার মৃত্যুর পর তাঁর মা তাঁকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। জোয়ান গ্র্যাফ ক্লুকাস রচিত জীবনী থেকে জানা যায়, ছোট্টো অ্যাগনেস মিশনারিদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প শুনতে বড়োই ভালবাসতেন। ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন মিশনারি হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অফ লোরেটো সংস্থায়। মা আর দিদিদের সঙ্গে আর তার কোনোদিন দেখা হয়নি।

    অ্যাগনেস প্রথমে আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যামে লোরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করতে যান। কারণ এই ভাষাই ছিল ভারতে সিস্টার্স অফ লোরেটোর শিক্ষার মাধ্যম। ১৯২৯ সালে তিনি ভারতে এসে দার্জিলিংয়ে নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ নেন।কলকাতার রাস্তাঘাটে অনেক দরিদ্রকে মারা যেতে দেখেছেন তেরেসা। অজ্ঞান এক মহিলাকে দেখে আঁতকে ওঠেন তিনি। দেহের অর্ধেকটা ইদুর ও পিপড়ায় খেতে শুরু করেছে। মাদার তেরেসা স্থির করলেন কাউকে আর একা মরতে দেয়া হবেনা। তিনি মরণাপন্ন মানুষদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন এবং নগর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় হিন্দু মন্দিরের পাশে পরিত্যক্ত এক বাড়িকে ‘হোম ফর দ্য ডাইং’ এ পরিণত করেন। পরে যেটির নাম দেয়া হয় ‘নির্মল হৃদয়’।

    এই কেন্দ্রের আশ্রয়ে কিছুটা শান্তি ও সম্মান পেতেন মৃত্যু পথযাত্রী মানুষরা। পেতেন চিকিৎসা ও পেটভরে খাবার। আজ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ তাদের শেষ আশ্রয় পেয়েছেন এই কেন্দ্রে।১৯৪৬ সালে ট্রেনে করে দার্জিলিং যাওয়ার দীর্ঘ পথে গভীর এক চেতনা জেগে ওঠে তাঁর মনে, যেন ঈশ্বরের বাণী শুনতে পান তিনি। দরিদ্র থেকেও দরিদ্র মানুষদের সেবা করাই হল তাঁর মিশন। ১৯৪৮ সালে পোপের অনুমোদন নিয়ে কনভেন্ট (সন্ন্যাসিনীদের আশ্রম) ত্যাগ করে ‘অর্ডার অফ সিস্টার্স’ গড়ে তোলেন তিনি। ১৯৫০ সালে আত্মপ্রকাশ করে ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ সংস্থা, স্বীকৃতি পায় ভ্যাটিকানের।মাত্র পাঁচ টাকা মূলধন নিয়ে তিনি যে মিশনারিজ অব চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন তা আজ সারা বিশ্বে সম্প্রসারিত হয়েছে শত শাখা-প্রশাখায়। মানবতার সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ শান্তির জন্য মাদার তেরেসাকে ১৯৭৯ সালে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। নোবেল পুরস্কারের ১৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য পুরস্কারের প্রায় এক কোটি টাকা সবই তিনি দান করেন মানবতার সেবায়।১৯৮০ সালে দেয়া হয় তাকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ উপাধি দেয়া হয়।১৯৮৩ সালে পোপ জন পল ২ এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফরের সময় মাদার তেরেসার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৯৮৯ সালে আবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর তার দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়।১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে থাকার সময় নিউমোনিয়া হওয়ায় হৃদরোগের আরও অবনতি ঘটে। 

    এই পরিস্থিতিতে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটগ্রহণের পর তেরেসাকে প্রধান থাকার অনুরোধ করে। অগত্যা তেরেসা চ্যারিটির প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।১৯৯৬ সালের এপ্রিলে পড়ে গিয়ে কলার বোন ভেঙে ফেলেন। আগস্টে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। এর পাশাপাশি তার বাম হৃৎপিণ্ডের নিলয় রক্ত পরিবহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাড়ান। একই বছর ৫ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন এই মহিয়সী নারী।

    Christo Sangeet Presenter

    খ্রীষ্ট সঙ্গীত অ্যাপ

    আপনার উপাসনার সঙ্গী, এখন আপনার হাতের মুঠোয়।

    সহজ ও নিরাপদ এবং সম্পূর্ণ অফলাইন সুবিধা।

    আজই ডাউনলোড করুন

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS