হে মনীষী প্রনতি তোমায় – ডঃ উইলিয়াম কেরী

ads20
    ডঃ উইলিয়াম কেরী ১৭৬১ খ্রীঃ ১৭ আগষ্ট নর্দাম্পটনশায়ার জেলার পলির্সি পিউরী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা এডমন্ড কেরী একজন তাতী ছিলেন। পরে অবশ্য অবৈতনিক একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। উইলিয়াম কেরী বাবার 
    সান্নিধ্যে ও সহচার্যে, ভূগোল, ইতিহাস, প্রানীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যায়ন করেন। পরে 
    কেরী নিজেকে একজন বহু ভাষাবিদ হিসেবে গড়ে তোলেন। গ্রীক, হিব্রু, ফরাসী ও ল্যাটিন ভাষায়
     দক্ষতা অর্জন করেন।
    কেরীর বাবার আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় সে অল্প বয়সেই অর্থ উপার্জনে মনোযোগী হন। প্রথমে 
    কৃষি কাজ করতে আরম্ভ করেন। কিন্ত চর্ম রোগের কারনে রৌদ্র তাপ সহ্য করতে না পারায় জুতা 
    সেলাইয়ের কাজ আরম্ভ করেন। তিনি প্রথমে টি, ওল্ড এর জুতার দোকানে কাজ করতে থাকেন। 
    আর এই সময় পরিচয় হয় চার্চ অফ ইংল্যান্ডের বিখ্যাত প্রচারক রেভাঃ টমাস স্কট এর সংগে। 
    এই ধর্ম প্রান ব্যাক্তির সান্নিধ্যে এসে উইলিয়াম কেরী ধর্ম চর্চায় মনোনিবেশ করেন এবং সকল
     প্রকার মন্দ অভ্যাস পরিত্যাগ করে খ্রীষ্টের আদর্শে জীবন যাপনে উদ্যোগী হন।
    Dr. William Carey

    ১৭৭৯ খ্রীঃ১৮ বছর বয়সে উইলিয়াম কেরী প্রভু যীশুকে ত্রানকর্তা মুক্তিদাতা বলে গ্রহন করেন, এবং নন-কনফরমিষ্ট সম্প্রদায়ে যোগদান করেন। ১৭৮১ খ্রীঃ ১০ জুন মাত্র ২০ বছর বয়সে উইলিয়াম কেরী বিয়ে করে সংসার জীবন আরম্ভ করেন। তাঁর স্ত্রী ডরথী প্লাকেট তাঁর চেয়ে ৫ বছরের বড় ছিলেন এবং লেখাপড়া জানতেন না। নব বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে একটি কুঁড়েঘরে সংসার জীবন আরম্ভ করেন। এখানে থেকে তিনি জুতা সেলাইয়ের কাজ আরম্ভ করেন এবং বিভিন্ন ধরনের বই পুস্তক পরতে মনোযোগী হয়ে পড়েন। আর এখানেই কুঁড়েঘরে তাঁর প্রথম কন্যা সন্তান এ্যানের জন্ম হয়।
     কিন্ত দুঃখের বিষয় এক বছর পরেই কন্যা সন্তানটি মৃত্যুবরন করে।১৭৮৬ খ্রীঃ উইলিয়াম কেরী মুলটনের একটি অবৈতনিক স্কুলে শিক্ষকতা আরম্ভ করেন। তবে 
    তিনি জুতা সেলাইয়ের কাজ চালিয়ে যান। এতসব কাজের ফাঁকে তিনি চামড়া দিয়ে পৃথিবীর একটি 
    মানচিত্র তৈরী করেন। পরে তিনি ধর্ম যাজকবৃত্তি গ্রহনের জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করেন এবং পেশা 
    হিসেবে গ্রহন করেন। এবং জুতা সেলাইয়ের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি ২৪ বছর বয়সে
     পালর্সপেরী মন্ডলীর দায়িত্ব গ্রহন করেন।
    পাষ্টর কেরী সেই সময় থেকে গ্রেট বৃটেনের বাইরে সুসমাচার প্রচারের সপ্ন দেখতে থাকেন অষ্টদশ 
    শতাব্দির শেষ দশকে উইলিয়াম কেরী সর্ব প্রথম বৃটেনের প্রোটেষ্ট্যান্ট খ্রীষ্টীয়ান্দের মাঝে বিশ্বের 
    প্রতিমা পূজকদের মধ্যে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচার ও প্রসারের প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেন। ১৭৯২ খ্রীঃ
    প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা বিখ্যাত পুস্তিকা –“দি–এন কোয়ারী” অনুসন্ধান। এর কিছুকাল পরেই 
    ইংল্যান্ডের নটিংহাম শহরে পার্ক ষ্ট্রীট ব্যাপ্টিষ্ট চ্যাপেলে পালক সমিতির অধিবেশনেই কেরী ব্যাপ্টিষ্ট 
    মিশনারী সোসাইটি গঠনের প্রয়োজনীয়তার উপর তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতায় বাইবেলের যিশাইয় 
    পুস্তকের ৫৪:২-৩ পদ উদ্বৃত করেন- “এক্সপেক্ট গ্রেট থিইংস ফরম গড, এট্টেম্প গ্রেট থিংস ফর গড.”
    ১৭৯২ খ্রীঃ ২ অক্টোবর পালক সমিতির পরবর্তী সম্মেলনে নর্দানম্পটন শায়ারের কেটারিং 
    শহরের অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সমবেত ১৪ জন নেতা একটি সোসাইটি স্থাপন করলেন-
     “দা প্রার্টিকুলার ব্যাপ্টিষ্ট সোসাইটি ফর প্রাপাগাটিং দা গসপেল এমং দা হিথেন”। এই সোসিইটির কাজ 
    পরিচালনার জন্য একটি কার্যকারী কমিটিও গঠিত হয়। এই কমিটির সদস্যবর্গ হলেন- জন রাইল্যান্ড,
     রেনল্ড হগ, উইলিয়াম কেরী, জন সর্ট ক্লিফ এবং এ্যান্ডু ফুলার। কালক্রমে এই সোসাইটি ব্যাপ্টিষ্ট 
    মিশনারী সোসাইটি নামে পরিচিতি লাভ করে।
    ১৭৮৩ খ্রীঃ জন টমাস নামে একজন চিকিৎসক যিনি ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীতে কাজ করার জন্যে
     ভারতবর্ষে আসেন। একজন ডঃ হিসেবে মূলতঃ তাঁর কাজ ছিল কোম্পানীর লোকদের চিকিৎসা করা।
     কিন্ত তাঁর সুসমাচার প্রচারের প্রবল আগ্রহ দেখে চালর্স গ্রান্ট এর নীল তৈরী কারখানায় শ্রমিকদের
     মাঝে ও গ্রামবাসীদের মাঝে সুসমাচার প্রচারের জন্য মিশনারীর চাকুরী দেন। মালদাহে এসে বাংলা
     শিখতে থাকেন রাম রাম বসু নামে একজন পন্ডিতের কাছে। পরে গুমালীতে নীল কারখানার 
    শ্রমিকদের মাঝে কাজ করেন এবং মথি লিখিত সুসমাচার বাংলায় অনুবাদ করতে থাকেন।
     কিন্ত চালর্স গ্রান্ট এর সংগে বনিবনা না
    হওয়ায় ট্অমাস চাকুরি ছেড়ে দিয়ে দেশে চলে যান। ইংল্যান্ডে এসে তিনি ব্যাপ্টিষ্ট মিশনারী সোসাইটির
     সংগে যোগদান করেন।
    ডঃ উইলিয়াম কেরী
    ১৭৯৩ খ্রীঃ ডাঃ জন  টমাস, উইলিয়াম কেরী, তাঁর 
    স্ত্রী ডরোথী, বোন ক্যাথরিন প্লাকেট, কেরীর চার 
    ছেলেমেয়ে- ফেলিক্স উইলিয়াম, পিটার, এবং ছোট্ট 
    ছেলে ১৩ই জুন বৃহস্পতিবার ক্রেন প্রিনসেমা মারিয়া
     নামক একখানি ডেনিস জাহাজে ভারতবর্ষের
     অভিমূখে যাত্রা করেন। প্রায় পাঁচ মাস পরে ১১ নভেম্বর জন টমাস, কেরী পরিবার হুগ্লী নদীর 
    অববাহিকায় অবতরন করেন। এবং নৌকাযোগে ২ দিনের পথ পাড়ি দিয়ে কোম্পানীর সহকারীর 
    লোকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোলকাতায় পৌঁছাতে সমর্থ হন। উইলিয়াম কেরীর বয়স তখন ৩২ বছর।
     উপমহাদেশে  ব্যাপ্টিষ্টদের খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারে প্রাথমিক পর্যায়ে জন টমাসের ভূমিকা ছিল প্রধান। কারন 
    ইতোপূর্বে জন টমাস ২ বার ভারতে এসেছিলেন। কেরী এবং জন টমাস যখন কোলকাতায় এসে পোঁছান
     তখন বি,এম,এস, তাদের জন্য ও মিশন কার্যের জন্য মাত্র একশত পঞ্চাশ পাউন্ড এক বছরের খরচের
     জন্য দিত। এই অর্থ নির্দ্ধারণ করা হয়েছিল জন টমাসের পূর্ব অভিজ্ঞতার বর্ননা থেকে। কারন 
    ইতোপূর্বে টমাস মালদাহ এসে বেশ কিছু দিন ছিলেন। কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছিল। কিন্ত মালদাহের 
    জীবন যাত্রায় ব্যয় এবং কোলকাতার জীবন যাত্রায় ব্যয় অনেক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছিল। ইয়াই 
    বি,এম,এসের দেওয়া অর্থ ২টি পরিবারের জন্য ভার বহন সম্পূর্ন অসম্ভব ছিল। তা ছাড়া জন
     টমাস একটু বেশী বেহিসেবী হওয়াতে এবং খরচ করার দায়িত্ব তাঁর উপরে থাকাতে মাত্র কয়েক 
    মাসের মধ্যেই উক্ত টাকা শেষ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। তাই তারা ব্যয় কমানোর জন্য কোলকাতা
     থেকে ৩০ মাইল দূরে হগলী নদীর তীরে ব্যান্ডেলে চলে যান সেই সময়ে বঙ্গদেশে রোমান ক্যাথলিক
     মিশন খ্রীষ্ট ধর্মের প্রধান কেন্দ্র ছিল এই ব্যান্ডেলেই। এখানের আধিবাসীদের অধিকাংশই ছিল পর্তুগীজ
     ও তাদের দেশীয় বংশধরগন। টমাস এবং কেরীর পরিবার এখানে এসে এক জার্মান হোটেলের 
    একটা ছোট বাড়ি ভাড়া করে বাস করতে থাকেন। তারা একটি নৌকা ক্রয় করে দুই ব্যাপ্টিষ্ট 
    হুগলী নদীর দুই পাড়ে অবস্থিত হিন্দু গ্রামগুলিতে সুসমাচার প্রচার করতে থাকেন। কিন্ত ব্যান্ডেলে 
    এসেও খরচ কমানো সম্ভব হচ্ছিল না। বরং মিশনের দেওয়া অর্থ আরও তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যেতে
    থাকল। ডাঃ টমাস পূর্ব দেনাদারদের তাড়া খেয়ে জেলে যাবার ভয়ে সে ব্যান্ডেল ত্যাগ করে 
    পূনঃ কোলকাতা ফিরে যেতে মনস্থ করলেন। টমাস কোলকাতায় ফিরে গিয়ে টাকা ধার করে
     সাহেব পাড়ায় একটি প্রকান্ড বাড়ি ভাড়া করে শৈল চিকিৎসকের ব্যাবসা আরম্ভ করেন। কেরী 
    হয়ে পরিবার নিয়ে কোলকাতা শহরের উত্তর পূর্ব উপকন্ঠে অবস্থিত মানিকলা নামে এক হিন্দু
     ব্যাবসায়ীর একটি খালি ঘরে কিছুদিন বিনা ভাড়ায় বাস করার অনুমতি পেলেন। এই সব ব্যাপারে
     রাম রাম বসুই কেরীকে সাহায্য করেন। মানিকতলায় এসে কেরী ও তার পরিবারকে এক অর্বনণীয়
    দুর্দশার মধ্যে পরতে হয়। গোটা পরিবার অপুষ্টিজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পরেন। রাম রাম বসুর 
    চেষ্টায় ১৭৯৪ খ্রীঃ জানুয়ারীতে কোলকাতায় এক হিন্দু জমিদারের কাছ থেকে কৃষি কাজের জন্য 
    দেবহাটায় এক খন্ড জমির বন্দোবস্ত লাভ করেন। কেরীকে তিন বছরের জন্য কোন খাজনা দিতে
    হবে না। কেরী ও তার পরিবার নৌকায় করে কোলকাতা থেকে দেবহাটা তিন দিনের পথ অতিক্রম 
    করে চলে এলেন। সেই সংগে শেষ হ’ল মানিকতলার দুর্বিসহ জীবনের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি লাভ। অবশ্য 
    এই সময় ডাঃ টমাস অনেক কষ্ট করে কেরীকে একজন হিন্দু মহাজনের কাছ থেকে ১২ রুপীর সুদের
     হারে দেরশত রুপী ঋণ নেবার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলান। ১৭৯৪ খ্রীঃ ফেব্রুয়ারি মাসে কেরী পরিবার
     এবং রাম রাম বসুকে সঙ্গে নিয়ে দেবহাটা (বর্তমানে সাতক্ষীরা) এসে বাস করতে থাকেন। তখন
     দেবহাটায় লবন শিল্পের সহিত জড়িত কয়েকজন ইউরোপীয়ান বাস করতেন। এই বিষয়ে কেরী পূর্বেই
     জানতেন। নৌকা যোগে তিন দিন পরে তাই ফেব্রুয়ারিতে যখন তারা দেবহাটায় পৌঁছান তখন চালর্স
     শর্ট নামে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একজন কর্মকর্তা অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের অভ্যর্থনা জানালেন। শর্ট
     তাদেরকে কোম্পানীর বাংলোতে থাকার সকল প্রকার ব্যাবস্থা করে দিলেন। এবং আপনজনের মতই 
    ব্যাবহার করেন। চালর্স শর্টের আথিতেয়থায় মুগ্ধ হয়ে কেরী পরিবারের পিছনের সকল কষ্ট ভুলে 
    যেতে সাহায্য করল। নদীর পার্শ্বে পাঁচ ছয় একর জমি বেছে নিয়ে সেখানে কৃষি কাজ ও একই সঙ্গে
     খ্রীষ্টীয় মিশন কেন্দ্র গড়ে তুলবার জন্য আত্মা নিয়োগ করলেন। এই সময়ের মধ্যে চালর্স শর্ট ও 
    কেরীর শ্যালিকা ক্যাথরিন প্লাকেট পরস্পরকে কাছে পেয়ে প্রেমে পড়ে এবং পরে বিয়ে হয়ে যায়। 
    এদিকে জন টমাসের একজন ধনবান বন্ধু জর্জ উডনী ১৭৯৪ খ্রীঃ ২টি নীলের কারখানা চালু করতে 
    চেয়েছিলেন। একটি মালদাহের ৩২ মাইল উত্তরে মদনাবতীতে, অপরটি আরো সতের মাইল দূরে মহীপাল 
    দীঘিতে। জর্জ উডনী এই ২টি নীলের কারখানার জন্য ম্যানেজার খুঁজছিলেন। সুযোগ বুঝে ডাঃ টমাস
     ঐ ২টি পদলাভের জন্য উডনীকে রাজী করাতে সমর্থ হয়েছিলেন। টমাস নিজের জন্য মহীপাল দীঘির
    নীল কারখানার ম্যানেজার পদটি বেছে নিলেন, এবং মদনাবতীতে নীল কারখানার ম্যানেজারের পদটি
     কেরীকে দেবার জন্য সকল ব্যাবস্থা করলেন। মদনাবতীতে ম্যানেজারের মাসিক বেতন দুইশত রুপী
    এবং বছরে মাত্র নীলের কারখানার কাজ প্রকৃতপক্ষে তিন মাসের কিছু বেশী থাকে। বাকী সময়
     তেমন কোন বিশেষ কাজ না থাকায় সুসমাচার প্রচার কাজ সুবিধাজনক হবে বলে কেরী মনে 
    করলেন। তা ছাড়া দেবহাটায় কেরীর মিশনারী জীবনের ভবিষৎ সম্পূর্ন অনিশ্চিত বলে মনে কলেন,
     এবং সুসমাচার প্রচারের ক্ষেত্রে ডাঃ টমাসের সকল প্রকার সাহায্য একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করে
     কেরী দেবহাটা পরিত্যাগ করে মদনাবতীতে চলে আসতে সিদ্ধান্ত নিলেন। সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে
     কেরীর অর্থ উপার্জনের একটি উত্তম পথ খুলে গিয়েছিল। কারন এত টাকা ইংল্যান্ড থেকেও রোজগার
     করতে পারেন নি। বিশেষ করে এই অর্থে তিনি এখন মিশন কার্য পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন সেই
     ভেবে এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইলেন না।

    ডঃ উইলিয়াম কেরী১৭৯৪ খ্রীঃ ২৩ মে খুব ভোরে দেবহাটা থেকে যাত্রা শুরু করে 
    নৌকা যোগে ২৩ দিনের পথ পাড়ি দিয়ে কেরী ও তার পরিবার
     ১৫ জুন মহানন্দা নদীর তীরে মালদা এসে পৌঁছালেন। ডরথীর
    বোন ক্যাথরিন স্বামী চালর্স শর্টের সঙ্গে সেখানেই থেকে গেলেন।
     কেরীর পরিবার মালদা এসে পৌঁছালে নীল কারখানার মালিক
     জর্জ উডনী তাদেরকে সাদরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান, এই সময়ে
     ডাঃ টমাস সেখানে ছিলেন এবং কেরীর সাথে তাঁর পুনঃমিলন
     ঘটল। জর্জ উডনীর মত একজন ধর্মপ্রান ব্যাক্তির সঙ্গে মিলিত
     হয়ে এবং প্রতিদিন প্রার্থনায় ও নিয়মিত উপসনায় যোগদান করতে পেরে কেরী ও টমাস আধ্যাত্মিক
     জীবনে প্রশান্তি লাভ করছিলেন। যে বিষয়টি দেবহাটায় কোম্পানীর বাংলোতে বসে চালর্স শর্টের সঙ্গে
     থেকে সম্ভব হয় নাই। কারন শর্ট এ ব্যাপারে খুবই উদাসীন ছিলেন।
    প্রথম থেকেই কেরীর প্রতি জর্জ উডনী সর্বদাই সদয় ছিলেন। কারখানার উৎপাদিত পন্যের উপার্জনের 
    লভ্যাংশের উপরে কমিশন দিতে চাইলেন। পরবর্তীতে শেয়ার দেবার ইঙ্গিতও উডনী সাহেব কেরীকে
     দিয়েছিলেন। সেই সময়ে কেরী বি,এম,এসের হোম কমিটিকে লিখে জানালেন বঙ্গদেশে মিশন কাজের
     জন্য তাকে আর অর্থ পাঠানোর প্রয়োজন নেই। তবে তিনি সব সময়েই সোসাইটির অধীনে থাকবেন।
     কিন্ত তিনি একটি বিশেষ অনুরোধ রেখেছিলেন যে, ডঃ টমাসকে যেন তাঁর ভাতা পাঠান হয়। 
    কারন টমাস তখনও অনেক ঋণ দেনায় ডুবে ছিলেন।
    মালদাহ থেকে মদনাবতীর দূরাত্ব ৩২ মাইল। জর্জ উডনী কিন্ত সব সময় মালদাহে বাস করতেন।
    কেরী মালদাহ থেকে মদনাবতীতে চলে গেলেন এবং নীল কারখানার ম্যানেজারের কাজে মনোযোগী
     হলেন। তিনি জানতেন যে উপমহাদেশে তাঁর আসল কাজ খ্রীষ্টের সুসমাচার প্রচার করা, আর নীল 
    কারখানার ম্যানেজারের কাজ হচ্ছে সেই মহান লক্ষ্য অর্জনের একটা প্রচেষ্টা মাত্র। ভারতীয়দের মন
     থেকে ইউরোপীয়ানদের সম্বন্ধে প্রভুত্বের মনোভাব ও কঠোর কঠিন আচার ব্যবহারের ধারনা দূর 
    বন্ধু সুলভ আচার আচরনের মাধ্যমে ভারতীয়দের মন জয় করেই সুসমাচার প্রচার করাই হ’ল 
    কেরীর একমাত্র লক্ষ্য।

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS