আমরা বাইবেল থেকে পাই পিতা পুত্র পবিত্র আত্মা-তিনে এক একে তিন। এই তিন সত্তার মধ্যে আমাদের ঈশ্বর। আদিতে ঈশ্বর আকাশমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করিলেন। তার পর ষষ্ট দিনে তিনি তার সাধের মানুষ সৃষ্টি করিলেন। ঈশ্বরের সৃষ্টির সাধের মানুষের মধ্যে পাপ আসার কারণে তিনি তাদের রক্ষার্থে বিভিন্ন সময় মহামানবদের পাঠিয়েছেন, যেন তার সাধের সৃষ্টির মানুষ পাপ থেকে রক্ষা পায়। এতেও মানুষ পাপ থেকে ফিরলনা। তার পর তিনি পাঠালেন তার প্রিয় পুত্র আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে। ঈশ্বর বললেন ইনি আমার প্রিয় পৃত্র ইহাইে আমি প্রিত । এর পরেও মানুষ তা বুঝতে না পেরে তাকে হত করেছিলেন। কিন্তু যীশু তার তৈরী শিষ্যদের বলেছিলেন আমার যাওয়া প্রয়োজন। আমি গেলে সেই সহায় তোমাদের উপর আসবে, আর তোমরা পবিত্র আমায় পরিপুর্ণ হইবে। প্রেরিত ২:৪ পদে- তাহাতে তাঁহারা সকলে পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন এবং সেই আত্মার দেওয়া শক্তিতে শিষ্যেরা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলিতে লাগিলেন। প্রেরিত ২; ১৭ পদে -পিতরের বক্তৃতায় বলেছিলেন-ঈশ্বর বলিতেছেন শেষ কালে সমস্থ লোকদের উপরে আমি আমার আত্মা সেচন করিব-----। সেই আত্মা হলো আমাদের প্রিয় বন্ধু। তিনি কি কি করতে পারেন-
ক) তিনি আপনাকে সাহায্য করতে পারেন।
খ) তিনি আপনাকে শিক্ষা দিতে পারেন।
গ) তিনি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে বাস্তব ভাবে প্রকাশ করতে পারেন।
ঘ) তিনি আপনার জীবনকে আর্শীবাদে পূর্ণ করতে পারেন।
বর্তমান সময়ে পৃথিবীর মানুষ আগের চেয়ে বেশী পবিত্র আত্মা ও তার কাজ সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে। বাইবেল বলে পবিত্র আত্মা একজন ব্যক্তির হিসাবে কাজ করে। পবিত্র আত্মা যখন কোন জীবনে নেমে আসে,তখন সেই জীবন ঈশ্বরের উপস্থিতিতে ভরে উঠে। পবিত্র আত্মা সকল মনোবৃত্তি ও ক্ষমতার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং তার ইচ্ছামত শক্তিকে ব্যবহার করেন। কোন এক জন লোক, মহান এক ব্যক্তিকে তার জীবনের সাফল্যের রহস্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন-উত্তরে তিনি বলেছিলেন”আমার একজন বন্ধু ছিলেন, তার সাহায্য ছাড়া আমার জীবন ব্যর্থ হয়ে পড়তো। তিনি আমাকে সাহায্য করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, পাশে এস দাড়িয়েছেন, ভালবেসেছেন, তার উপর বিশ্বাস আমাকেও আমার জীবনকে যোগ্য করে তুলেছেন। আপনার জীবনে কি কোন বন্ধু আছে? আপনি বলবেন অবশ্যই আছে,কিন্তু কথা হচ্ছে আপনি কোন ধরনের কন্ধু পেতে চান? আপনি নিশ্চই এমন বন্ধু পেতে চান, যিনি আপনার সমস্যার সংগে থাকবেন, আপনার সুখের ভাগী হবেন, সকল খোলখুলি কথা বলা যাবে। তিনি আপনার মংগলের জন্য সহানুভুতি সহকারে আপনার দোষ দেখিয়ে দিবেন।
নিশ্চই আপনি এমন একজন বন্ধু খুজবেন বা পছন্দ করবেন যিনি আপনার চাইতে জ্ঞানে ও শক্তিতে বড়। তিনি আপনাকে শিক্ষা দেবেন, সমস্যায় সাহায্য করবেন। যত বেশী তার সংগে আপনি সময কাটাবেন, তত বেশী শক্তি ও জ্ঞানে বৃদ্ধি পেতে থাকবেন এবং তাঁর সংগে আরো ঘনিষ্ট হয়ে উঠবেন। পবিত্র বাইবেল অনুযায়ী যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন পিতর, যাকোব, যোহন ও ্অন্যান্য সকল শিষ্যের কাছে প্রিয বন্ধু । তিনি সকলকে পাপ মোচনের ও সুস্থ করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তিনি ধনী গরীব, পাপী-ধার্মিক, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল প্রকার লোকদের বন্ধু ছিলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, তিনি পিতার নিকট ফিরে গিয়ে এমনএকজন সাহায্যকারী বন্ধুকে পাঠিয়ে দিবেন, যিনি একই সময় সর্বদা তাদের সংগেও থাকবেন। যোহন : ১৪: ১৫-১৭ পদে- তোমরা যদি আমাকে প্রেম কর, তবে আমার আজ্ঞা সকল পালন করিবে। আর আমি পিতার নিকটে নিবেদন করিব,এবং তিনি আর এক সহায় তোমাদিগকে দিবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সংগে থাকেন। তিনি সত্যের আত্মা; জগত তাহাকে গ্রহণ করিতে পারে না, কেননা সে তাঁহাকে দেখে না, তাঁহাকে জানেও না, তোমরা তাঁহাকে জান, কারণ তিনি তোমাদের নিকট অবস্থিতি করেন ও তোমাদের অন্তরে থাকিবেন। এই পবিত্র আত্মা আমাদের প্রিয় বন্ধু, ত্রিত্বের তৃতীয় ব্যক্তি, তিনি ঠিক পিতা ঈশ্বর, পুত্র যীশুর স্বভাব, ক্ষমতা ও উদ্দেশ্য এক। তিনি সর্বজ্ঞ ও সকল ক্ষমতার অকিারী। তার কোন দেহ নাই, তবে একই সময সকল স্থানে উপস্থিত থাকতে পারেন। যীশু এই প্রতিজ্ঞাত পবিত্র আত্মাকে পঠিয়েছিলেন, যেন যাহারা তাহাকে গ্রহন করিবে, তাহাদের জীবনে তিনি বাস করিতে পারেন। যীশু তার শিষ্যদের জন্য যা করেছিলেন, পবিত্র আত্মা আপনার জন্য তা-ই করতে এসেছেন।
যোহন ১৬: ৭ পদে-- যীশু বলেন, আমি তোমাদের সত্য কথা বলিতেছি যে, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল , কারণ আমি না গেলে সেই সহায় তোমাদের নিকট আসিবে না। কিন্তু আমি যদি যাই তবে তাঁহাকে তোমাদের নিকট পাঠাইয়া দিব। আপনার কি প্রয়োজন তা ঈশ্বর ঠিকই জানেন এবং সমাধানও করেন। তিনি আপনাকে আমাকে এত ভাল বাসেন যে, বিশেষ সহায় পবিত্র আত্মাকে আপনার আমার বন্ধু হিসাবে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র আত্মাকে বন্ধু হিসাবে পেল আর কখনও ভাবতে হবে না যে, আপনি নি:সংগ,সহায়হীন।
যীশু আর এক সহায় পাঠিয়ে দেবার কথা বলেছিলেন। গ্রীক শব্দে তাকে বলা হয়েছে”প্যারাক্লিট”কেউ আবার সান্তনা দানকারী হিসাবে অনুবাদ করেছেন, তার অর্থ পাশাপাশি কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকা। প্যারাক্লিট নামের অন্য অর্থ তার দায়িত্ব ক্ষমতা এবং কিভাবে আপনাকে সাহায্য করবেন তা বলা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে জীবনের আত্মা, পবিত্র আত্মা, সত্যের আত্মা, যীশুর আত্মা, ঈশ্বরের আত্মা যা-ই বলা হোক না কেন তার সমাধান আপনার বন্ধুর হাতে রয়েছে।
জীবনের আত্মা -আজকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রার্থনার মাধ্যমে পবিত্র আত্মার শক্তিতে অসু¯্য’ লোক অলৌকিভাবে সুস্থতা লাভ করছে, বধির শুনতে পারছে, অন্ধ দেখতে পারছে, এমন কি পক্ষাঘাত রোগী তার লাঠি ফেলে দিয়ে হাঁটতে পারছে । ঈশ্বর তাঁর প্রিয় পুত্র আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে সেই কাজ শুরু করেছিলেন এবং আজও সে কাজ পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে করে চলেছেন। তিনি আমাদের জীবনকে ভরে তুলেন এই পৃথিবীতে আনন্দ ও পরিতৃপ্তিতে, সেই সংগে ভবিষ্যতের জন্য দেন অনন্তকালীন গৌরবময প্রত্যাশা। কিন্তু আত্মা যে জীবন আপনাকে উপভোগ করতে দিয়েছেন, তাকে অবশ্য সুযোগ দিতে হবে আপনার জীবনকে পরিচালনা করতে।
রোমীয় ৮: ৫-৬ পদে-- যহারা পাপ স্বভাবের অধীনে তাহাদের মন পাপ স্বভাব যাহা চায় তাহাতে আগ্রহী হয়, আর যাহারা পবিত্র আত্মার অধীন, তাহাদের মন পবিত্র আত্মা যাহা চান তাহাতে আগ্রহী হন। পাপ স্বভাব যাহা চায় তাহাতে আগ্রহী হইবার ফল মৃত্যু , আর পবিত্র আত্মা যাহা চান তাহাতে আগ্রহী হইবার ফল জীবন ও শান্তি।
পবিত্র আত্মা: আপনি কি মনে করেন যে, পবিত্র আত্মায় জীবন যাপন করা খুব কঠিন ? আপনি কি সুন্দর খ্রীষ্টিয় জীবন যাপন করতে চান? আপনার সাহায্যকারী বন্ধু হচ্ছেন পবিত্র আত্মা। পবিত্র আত্মা আমাদের জীবনে দেখিয়ে দেন পাপ কত ভয়াবহ এবং কিভাবে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? আমরা যখন তাকে খুলে বলি, তখন তিনি আমাদের ঈশ্বরের কাছে নিয়ে যান। আর ঈশ্বর আমাদের পাপ, গর্ব,স্বার্থপরতা, অবাধ্যতা, রাগ, ঘৃণা, অলসতা, বিদ্রোহ, লোভ, নীতিভ্রষ্ট চিন্তাগুলোকে দুর করেন।
আপনার জীবনে এমন কতগুলো খারাপ বিষয় রয়েছে, যা থেকে আপনি মুক্তি পেতে চান। আপনি যদি যীশুর সন্তান হন তাহলে এ সকল খারাপ বিষয় থেকে মুক্ত করবেন, যা আপনার ক্ষতি সাধন করতে চলেছে। অনেক মানসিক রোগী, মদ্রপায়ী, হতাসাগ্রস্থ লোককে ডাক্তার নার্স, সমাজ কর্মীরা সাময়িক ভাবে তাদের সহায়্য দিতে পেরেছে কিন্তু শেষ পর্যস্ত তারা ফিরে এসেছে ঈশ্বরের কাছে সাহয্যের জন্য। যীশুকে পরিত্রান কর্তা হিসাবে গ্রহণ করার পর পবিত্র আত্মার আহ্বান করেছে, যেন ঈশ্বরের জন্য জীবন যাপন করার শক্তি তারা পায়। যখন পবিত্র আত্মার শক্তি তাদের জীবনে এসেছে তখন তারা সেই কুপ্রভাব থেকে মুক্ত হয়েছে, জীবনের সকল মন্দতা ত্যাগ করে পরম শান্তি পেয়েছে।তারা নতুন ভাবে জীবন যাপন শুরু করেছে।
১ম পিতর ১: ২ পদে -- পিতা ঈশ্বর তোমাদের আগে থেকে জানিতেন এবং সেই অনুসারে তিনি তোমাদের বাছিয়া লইয়াছেন: আর তাঁহারই উদ্দেশ্যে পবিত্র আত্মা তোমাদের আলাদা করিয়া রাখিয়াছেন। এই জন্যই তোমরা যীশুর বাধ্য হইয়াছো, আর এই জন্যই তাঁহার রক্ত ছিটাইয় তোমাদের পবিত্র করা হইয়াছে। যীশু যেমন তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি ভাবে পবিত্র আত্মা আপনাকে শিক্ষা দেবেন। তিনি আপনাকে জীবনের উদ্দেশ্য বলে দেবেন, এবং সকল প্রশ্নের উত্তর দেবেন।
যোহন : ১৬: ১৩ পদে কিন্তু সেই সত্যের আত্মা যখন আসিবেন, তখন তিনি তোমাদের পথ দেখাইয়া পূর্ণ সত্যে লইয়া যাইবেন। তিনি নিজ হইতে কথা কহিবেন না, কিস্তু যাহা কিছু শুনবেন তাহাই বলিবেন, আর যাহা কিছু ঘটিবে তাহাও তিনি তোমাদের জানাইবেন।
প্রজ্ঞার আত্মা----আপনি কি আপনার সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন, কি করবেন ভেবে? প্রজ্ঞার আত্মা আপনাকে সাহায্য করতে এসেছেন। তিনি আপনাকে পরিচালনা দেবেন এবং দেখিয়ে দেবেন আপনার করনীয় কি? ঈশ্বরের কাজ করতে গিয়ে আপনার কি জ্ঞানের প্রয়োজন? আপনি প্রার্থনা করুন উত্তর পেযে যাবেন। প্রেরিত পুস্থকে দেখবেন প্রভুর সন্তানেরা কিভাবে প্রজ্ঞা লাভ করেছিলেন।
প্রেরিত ৫; ১২,১৬ পদ- প্রেরিতেরা লোকদের মধ্যে অনেক আশ্চার্য আশ্চার্য কাজ করিতেন। আর বিশ্বাসীরা সকলে শলোমনের বাড়ান্দায় এক সংগে মিলিত হতেন। আর জেরুজালেমের আশেপাশের গ্রামগুলো হইতে অনেক লোক তাহাদের রোগীদের এবং ভুতের হাত হইতে কষ্ট পাওয়া লোকদের আনিয়া ভর করিতে লাগিলেন। আর প্রেরিতদের মাধ্যমে সেই সকল রোগী সুস্থ হইলেন। সেই সময়ে বিশ্বাসীরা পবিত্র আত্মার ক্যারিসমা বা অলৌকিক দান পেয়েছিলেন, যীশু যে কাজ করেছিলেন, সেটি চালিয়ে যাবার জন্য তা তাদের প্রয়োজন ছিল। ১ম করিন্থিয় ১২ অধ্যায়ে ৯টি দানের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে তিনটি হচ্ছে বিশ্বাসের দান, আরোগ্য সাধন ও পরাক্রম কার্য সাধনের দন।
চলবে-----