যীশু খ্রীষ্টের দেওয়া নিস্তারপর্বে শেষ ভোজ

ads20
    পা ধুয়ে দেওয়া পর, এই রাতে প্রভু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে এক বিশেষ ভোজ প্রস্তুত করেন, যা প্রভু যীশুর শেষ নৈশ ভোজ হিসেবে পরিচিত।
    নিশান মাসের 14 তারিখে নিস্তারপর্ব পালিত হতো। হিব্রু শব্দ Pasach থেকে এসেছে Pass over - নিস্তারপর্ব।

    যাত্রাপুস্তক 12:12 পদে ঈশ্বর বলেছেন, ‘‘কেননা আমি সেই রাত্রিতে মিশর দেশের মধ্যে দিয়ে যাবো এবং মিশর দেশের মনুষ্যের ও পশুর যাবতীয় প্রথমজাতকে আঘাত করিব এবং মিশরের যাবতীয় দেবের বিচার করিয়া দন্ড দিব; আমিই সদাপ্রভু’’ । কেন প্রভু যীশু জীবনের এই শেষ রাতে এই ভোজে মিলিত হলেন? এর উত্তর ঐতিহাসিক। যাত্রাপুস্তক 12:14 পদে আছে, ঈশ্বর বলছেন, ‘‘আর এই দিন তোমাদের জন্য স্মরণীয় হবে এবং তোমরা এই দিনকে সদাপ্রভুর উৎসব দিন বলে পালন করবে’;। কারণ এই দিনে ঈশ্বর যিহুদী জাতিকে 400 বছরের পরাধীনতা থেকে মুক্ত করেছিলেন- ‘‘দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে স্বাধীন করেছিলেন’’।

    প্রভু যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, তোমরা অমুক ব্যক্তির নিকটে যাও আর তাহাকে বল শুরু কহিতেছেন- ্আমার সময় সন্নিকট, তোমারই গ্রহে আমার শিষ্যগণের সহিত নিস্তারপর্ব পালন করিব।’’ অর্থাৎ তিনি আগে থেকে কোথায় ভোজ পালিত হবে তার সব ব্যবস্থা করেছিলেন। যিহুদীদের এই পর্বের দিন শুরু হতো সন্ধা 6 টা থেকে । তাই বৃহস্পতিবার  সারা দিন লেগে যায় তাড়িশূণ্য রুটি করলে খেতে ভাল লাগে কিন্তু প্র্রস্তুত করতে অনেক সময় লাগে। তাই মিশর থেকে যে রাত্রে তারা নিস্তার পেয়েছিল সে রাত্রে তাদের বলা হয়েছিল যে, তারা যেন রুটি প্রস্তুত করতে অযথা সময় নষ্ট না করে। কারণ তাড়ি বা খামি যাতে  দূষিত বা কলুষিত না হয়। সেই প্রথাটি শতাব্দীর পর শতাব্দী প্রচলিত। তাই বৃহস্পতিবার তাদের এটাই নির্দেশ ছিল, সকল প্রকার তাড়িময় বস্তু সরিয়ে নিয়ে বিশুদ্ধ খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করতে। যে রাত্রে  ইহুদীরা মিশর থেকে নিস্তার পেয়েছল, সেই রাত্রে তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল যে, একটি মেষশাবককে বলি দিয়ে তার রক্ত নিয়ে চৌকাঠের উপরে এবং পাশে দাগ দেওয়া । যাতে মিশর দেশের উপর দিয়ে মৃত্যুদূত চলে যাবে, তখন যাদের চৌকাঠে মেষশাবকের রক্ত পাওয়া যাবে তারা মৃত্যু থেকে মুক্তি পাবে (যাত্রা 12:21-23 । এই প্রথা পালনের জন্যই বৃহস্পতিবার দুপুরে মেষশাবক নিয়ে গিয়ে মন্দিরে বলিদান করে সেই মেষমাবকের রক্ত প্রায়শ্চিত্তের জন্য ঈশ্বরের কাজে সমর্পণ করতে হতো। তাই শিষ্যেরা বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্দির গিয়ে সে সকল  ব্যবস্থা করলেন এবং ফিরে এসে মেষশাবকের মাংস খাদ্যরূপে প্রস্তুত করলেন। এছাড়াও খাবার টেবিলের উপরে যা কিছু রাখার প্রথা ছিল-

    1.  একটি পাত্রে লবণ ও জল । এটি তাদের স্মরণ করিয়ে দিত মিশরে তারা দাস হিসেবে কত চোখের জল ফেলেছে এবং লোহিত সাগরের নোনতা জল, যে সাগর তারা পার হয়ে এসেছিল ঈশ্বরের মহানুগ্রহে।

    2. কিছু তেতো শাক যা স্যালাড জাতীয় খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হত। এই তেতো শাক মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, দাস রূপে তাদের কত তিক্ততার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। পাশে এক গোছা হিসপ রাখা হোত, যা মনে করিয়ে দিত যে, এই হিসপের নল দিয়ে চৌকাঠের মাথায় এবং পাশে রক্ত লাগান হয়েছিল।

    3. একটি পাত্রে আপেল, খেজুর , বাদম- এগুলি নিয়ে পেষাই করে মাখা মাখা করে রাখা হতো এবং পাশে কিছুটা ডাল ও চিনি রাখা হতো। এগুলো মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, মাটি মাখিয়ে খড় দিয়ে কীভাবে তাদের পূর্ব পুরুষগণ ইট বানিয়েছিল মিশরের দাসত্বের দিনগুলিতে।

    4.চারটি পাত্রে দ্রাক্ষারস রাখা হতো। এটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ঈশ্বরের চার প্রতিজ্ঞা- যাত্রাপুস্তুক 6:4-6 (ক) আমি যিহোবা, আমি তোমাদিগকে মিশরীয়দের ভারের নিচ থেকে বের করে আনব। তাদের দাসত্ব থেকে উদ্ধার করব। (খ) প্রসারিত বাহু ও (গ) মহৎ শাসন দ্বারা তোমাদের মুক্ত করব।। (ঘ) তোমাদের আপন প্রজারূপে গ্রাহ্য করব ও তোমাদের ঈশ্বর হব।’’

    এসব প্রস্তুত করতে বৃহস্পতিবার দুপুর পার হয়ে যেত। আর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা 6 টা থেকে হিব্রু ক্যালেন্ডার অনুসারে নিশান মাসের 15 তারিখ পড়ত এবং সেটি হতো শুক্রবার।

    পুরাতন নিয়মের ভোজ ছিল মিশরের নিস্তারপর্বের ভোজ । প্রভু যীশু বলেছেন এই ভোজ হচ্ছে, ‘‘Feast of the New Covenant'' - নতুন নিয়মের ভোজ। এই ভোজে মেষশাবক যীশু স্বয়ং নিজে বলি হলেন। এজন্যই যোহন বাপ্তাইজক যিনি খ্রীষ্টের অগ্রে এসে পথ তৈরী করে বলেছিলেন, ‘‘ ঐ দেখ ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার নিয়ে যান’’ যোহন 1:29 । প্রভু যীশু নিজের স্বয়ং মেষশাবক হিসেবে ক্রুশে বলি হয়ে নিম্পাপ রক্তের স্রোত প্রবাহিত করলেন।

    প্রভু যীশু রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং তা টুকরো টুকরো করে শিষ্যদের হাতে দিয়ে বললেন, ‘‘ লও খাও, তোমাদের জন্য সমর্পিত আমার এ দেহ, আমার স্মরণার্থে তা কর। সেই রূপে সান্ধ্য ভোজের পর তিনি পানপাত্রটি হাতে নিলেন। ও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে তাঁদের দিলেন ও বললেন, তোমরা সকলে এ পানপাত্র হতে পান কর, কারণ এই আমার রক্ত , নতুন নিয়ম স্থাপনের জন্য এবং তোমাদের ও অনেকের পাপ মোচনের জন্য পাতিত। যতবার তা পান করবে, আমার স্মরণার্থে তা কর (মার্ক 14:22-24)।

    এ সকল করার অর্থ কি? নিস্তারপর্ব অনুষ্ঠানটি ছিল মিশরের দাসত্ব থেকে ইস্রায়েল জাতির মুক্তির অনুষ্ঠান। যীশু যখন দেখলেন, ইস্রায়েল জাতি তাঁকে মশীহরূপে গ্রহণ করতে রাজি নয়, তখন তিনি এই প্রভুর ভোজ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এক নতুন ইস্রায়েল গোষ্ঠীর পরিকল্পনা কররেন এবং প্রথমে তাঁর শিষ্যদের নিয়েই তা শুরু হলো। যে কেউ প্রভু যীশুর আত্মোৎসর্গকে তার মুক্তির মুল্যরূপে গ্রহণ করে, তারই রাখা রুটি ভাঙ্গাটাকে তাঁর দেহ ভাঙ্গার চিহ্নস্বরূপ এবং দ্রাক্ষারসকে তাঁর রক্তপাতের চিহ্নস্বরূপ শিষ্যদের সামনে রাখলেন। পানপাত্র থেকে পান করার সময় শিষ্যদের তিনি মনে করিয়ে দিলেন যে, এটির দ্বারা তিনি একটি‘‘ নতুন নিয়ম’’ স্থাপন করেছেন। এটি হলো একটি ‘‘সাক্রামেন্ট ’’ পবিত্র অনুষ্ঠান। সেই ভোজের শেষে যখন তারা টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ালেন , তখন ঈস্কোরীতিয় যিহুদা ছাড়া তারা প্রভুর মৃত্যুর মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে সংযুক্ত হলেন।

    ভোজের শেষে গেৎশিমানী বাগানে তারা উপস্থিত হলেন। পিতর, যোহন, যাকোবকে নিয়ে একটু দূরে যীশু উপস্থিত হলেন এবং প্রার্থনায় নিবিষ্ট হলেন। তারা শুনলেন, যীশু বলছেন, যদি সম্ভব হয় তাহলে এই দুঃখের পেয়ালা তাঁর কাছ থেকে তাঁর পিতা যেন সরিয়ে নেন। তবুও তাঁর ইচ্ছামতে নয়, তাঁর পিতার ইচ্ছাই পূর্ হোক। এখানে যেন আর একটি শয়তানের পরীক্ষা । ক্রুশ ছাড়া পরিত্রাতার ভূমিকা পালন করার ইচ্ছা। কিন্তু পরিশেষে যীশু তাঁর পিতাকেই গ্রহণ করলেন। অদূরেই বিশ্বাসঘাতক ঈস্কোরীতিয় যিহুদা পুরোহিতদের কিছু সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাঁর কাছে এসে তাঁকে চুম্বন করে তাদের হাতে তুলে দিল। এই ঘটনার সময় শিষ্যদের সঙ্গে কিছু ধস্তাধস্তি হয়েছিল, তবে তা নাম মাত্র। একজন শিষ্যকে যখন ধরা হলো তখন সে কাপড় খানা ছেড়ে দিয়ে গালি গায়ে পালিয়ে গেল (মাক
     14:52)।

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS