শতানের সৃষ্টির বিষয়ে পবিত্র বাইবেল কি শিক্ষা দেয়?

ads20











     

    জনসন সরকার: ছোটবেলা হতে শুনে এসেছি ,এক আতিœক প্রাণীর কথা। যে সর্বদা আমাদের পথভ্রষ্ট করতে ইচ্ছুক। কিন্তু সে ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ পরিচয় স¤পর্কে আমি অজ্ঞ ছিলাম। আমি অনেক মানুষকে সেই আতিœক প্রাণীর স¤পর্কে প্রশ্ন করে, জানতে চাইলামঃ ১। কিভাবে তার সৃষ্টি হয়েছিল? ২। তার নামের অর্থ কি? ৩। সেই আগে কি করত? ৪। কি কারনে সে ঈশ্বরের শত্র“তে পরিনত হল? ইত্যাদি। কিন্তু দেখা গেল তারা তাদের মনগড়া ব্যাখ্যা দিতে শুরু করলেন। কারন  তারা কেউই বাইবেল থেকে কিছুই প্রমান দিতে পারলেন না। কিন্তু আমিও হাল ছেড়ে দেইনি। আমি অনেক অনুসন্ধান করে অবশেষে তা আবিস্কার করতে সক্ষম হলাম। তাই সেই বিষয়টা আমি খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের কাছে তুলে ধরতে চাই।শয়তান শব্দের অর্থ হলো ‘বিপক্ষ’,  দিয়াবল শব্দের অর্থ ‘অপবাদক’,এবং তাকে পুরাতন সর্পও বলা হয়(প্রকাশিত বাক্যঃ১২:৯)। শয়তান ছিল একটি স্বর্গদূত। অবশ্য স্বর্গের দূতেদের মধ্যে শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। শয়তান ছিল করূব শ্রেণীর এক দূত।  ঈশ্বর সদাপ্রভু, শয়তান কে অন্যান্য  দূতের চেয়ে বেশি সুন্দর রূপে সৃষ্টি করেছিলেন।
    সৌন্দর্যের কারনে শয়তান নিজের জ্ঞান নষ্ট করেছিল। কারন সে নিজেকে নিয়ে গর্ব করেছিল। শাস্ত্র বলে, “তোমার চিত্ত তোমার সৌন্দর্যে গর্বিত হইয়াছিল তুমি নিজ দীপ্তি হেতু আপন জ্ঞান নষ্ট করিয়াছ।” (যিহিষ্কেল ২৮:১৭;)। সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি, শয়তান নিজের সৌন্দর্য নিয়ে গর্ববোধ করতো, এভাবে সে অহংকারী হয়ে উঠেছিল।
    আমরা জানি  ঈশ্বর সদাপ্রভু  তার নবীদের  মধ্য দিয়ে তার বাক্য মানুষের কাছে পাঠিয়েছিলেন, “নিশ্চয়ই প্রভু সদাপ্রভু আপনার দাস ভাববাদিগনের(নবীদের) নিকটে আপন গূঢ় মন্ত্রণা প্রকাশ না করিয়া কিছুই করেন না।”( আমোষ ৩:৭;)। ঈশ্বর সদাপ্রভু,  নবী যিহিষ্কেলের মাধ্যমে সোরের রাজার কাছে শয়তান স¤পর্কে এই বাক্য দিয়েছিলেন। “পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য -সন্তান, তুমি সোরের রাজার জন্য বিলাপ কর, ও তাহাকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি পরিমানের মুদ্রাঙ্ক, তুমি পূর্ন জ্ঞান, তুমি সৌন্দর্যে সিদ্ধ;  তুমি সদাপ্রভুর উদ্যানে এদনে ছিলে; সর্বপ্রকার বহুমূল্য প্রস্তর, চূনি, পীতমনি, হীরক বৈদূর্য মনি, গোমেদক, সূর্যকান্ত, নীলকান্ত, হরিণ¥ণি ও মরকত, এবং স্বর্ণ তোমার আচ্ছাদন ছিল, তোমার ঢাকের ও বাঁশীর কারুকার্য্য তোমার মধ্যে ছিল; তোমার সৃষ্টিদিনে এ সকল প্রস্তুত হইয়াছিল। তুমি আভিষিক্ত আচ্ছাদক করূব ছিলে, আমি তোমাকে স্থাপন করিয়াছিলাম, তুমি ঈশ্বরের পবিত্র পর্ব্বতে ছিলে; তুমি অগ্নিময় প্রস্তর সকলের মধ্যে গমনাগমন করিতে। তোমার সৃষ্টি দিন অবধি তুমি আপন আচারে সিদ্ধ ছিলে ; শেষে তোমার মধ্যে অন্যায় পাওয়া গেল।”( যিহিষ্কেল ২৮:১২-১৫;)।
    তাহলে আমরা জানতে পারছি যে, ঈশ্বর সদাপ্রভু, শয়তানকে একটি করূব দূত হিসাবে সৃষ্টি করেছিলেন, তাকে অনেক জ্ঞান দিয়েছিলেন, তাকে এদেন উদ্যানে রক্ষাকারী দূত হিসাবে রেখেছিলেন। কারন তাকে এই কাজের জন্যই অভিষিক্ত করা হয়েছিল, (*অভিষিক্ত আচ্ছাদক করূব)। আর তাকে অনেক ক্ষমতা দিয়েছিলেন। যেমন বলা হয়েছে, সে অগ্নিময় পাথরের উপরের উপর দিয়ে চলাচল করতো।
    শয়তানের মনে একটি ইচ্ছা জন্ম নিয়েছিল, সে বলেছিল, “আমি মেঘরূপ উচ্চস্থালীর উপরে উঠিব, আমি পরাৎপরের তুল্য হইব।”( যিশাইয় ১৪:১৪;)। শয়তান নিজেকে, সদাপ্রভুর সমান ভাবতে শুরু করেছিল। এই ইচ্ছার দরুন সে নিজেকে শয়তানে পরিনত করল। অর্থাৎ সে প্রথম ব্যক্তি যে সদাপ্রভুর বিপক্ষ হলো এবং আদম -হবাকে বিভ্রন্ত করলো(আদিপুস্তক৩:১-৫) । সেই জন্য শয়তানকে, ঈশ্বর সদাপ্রভু, স্বর্গ হতে এই পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত করলেন।
    সেই জন্য  প্রভু  যীশু খ্রীস্ট বলেছিলেন, “আমি শয়তানকে বিদ্যুৎতের ন্যায় স্বর্গ হইতে পতিত দেখিতে ছিলাম।”(লূক ১০:১৮;)। আরো লেখা আছে,”সমস্ত জগৎ সেই  পাপাতœার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।”(১যোহন ৫:১৯;)। সেই আতিœক প্রাণী অনেক ক্ষমতার অধিকারি। সেইজন্য তাকে এই যুগের দেব(২করিন্থিয়৪:৩-৪;) বলা হয়েছে। এই পৃথিবীতে সেই আতিœক প্রাণীই প্রকৃত শাসক হিসাবে বিদ্যমান রয়েছে। সেই কারনেই তো জগতে মন্দ লোকেরাই বেশী প্রাধাণ্য পায়। শয়তান সকলকে লোভের ফাঁন্দে ফেলতে চায়। প্রভু যীশুর বেলাও তাই ঘটল। সে প্রভু যীশুকে একটি পর্বতের উপরে নিয়ে গিয়ে, “জগতের সমস্ত রাজ্য ও সেই সকলের প্রতাপ দেখাইল, আর তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ভূমিষ্ঠ হইয়া আমাকে প্রণাম কর, এই সমস্ত আমি তোমাকে দিব।”(মথি৪:৮-৯;)। প্রভু যীশু শয়তানের কাছে হেরে জান নি। প্রভু যীশুর বাক্য থেকে প্রমাণিত হয়, ঈশ্বর সদাপ্রভুর রাজ্য পৃথিবীতে স¤পূর্ণভাবে প্রতিষ্টিত হয়নি। কারন প্রভু যীশু, শয়তানের কর্তিত্বকে অস্বিকার করেননি বরং তিনি শয়তানকে এই জগতের অধিপতি বলেছিলেন(যোহন ১২:৩১; ১৪:৩০ ১৬:১১;)। তিনি প্রার্থনাতে শিখিয়ে ছিলেন, “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতে হউক।”(মথি ৬:১০)। ঈশ্বরের রাজ্য আসবার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। আমরা এটা বিশ্বাস করি খুব শীঘ্রিয় মন্দ জগতের অবসান ঘাটাতে পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু এবং তাদের শক্তিশালি দূতেরা আসবেন। ধ্বংস করে দেবেন পাপের সমস্ত কর্তিত্বকে(প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-২১;)।
    আমাদের বিভ্রান্ত করবার জন্য শয়তান অনেক রকমের ফাঁদ পেতে বসে আছে, যেমেনঃ মায়াবিদ্যা,বেশ্যাগিরি, নরহত্যা, প্রতিমাপূজা, মিথ্যা রচনা। এ সমস্ত জঘন্যতম কাজ থেকে আমদের পৃথক থাকতে হবে। কারন যারা এই সমস্ত কাজ করে, তারা প্রভুর কাছে কুকুরের সমতুল্য (প্রকাশিত বাক্য ২২:১৫;) প্রভু যীশু খ্রীষ্টের কথার সারমর্ম এই, “তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর।”(রোমীয় ১২:২১;)। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। “প্রভু যীশুর অনুগ্রহ পবিত্রগণের সঙ্গে থাকুক। আমেন। – প্রাকশিত বাক্য ২২:২১;।

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS