ঈশ্বর পরিত্যক্ত খ্রীষ্ট

ads20

    ‘‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ (মথি 27:46)|রবিবারের সকালে যখন আমি প্রচার করি তখন সাধারনত সেটা যুবকদের উদ্দেশ্যে করে থাকি| আমি এটা করি কারণ সবসময়ে রবিবারের সকালে আমাদের মন্ডলীতে অনেক যুবক আসেন যারা কখনও পরিস্কারভাবে সুসমাচার শোনেননি| আমরা বাইরে বিভিন্ন মল, কলেজ এবং অন্য অনেক জায়গায় গিয়েছি যেখানে যুবকরা জমায়েত করেন এবং আমরা আপনাকে এখানে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি| আর আপনি এসেছেন, এবং আমি কৃতজ্ঞ যে আপনি এসেছেন| এখানে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ|

    কিন্তু প্রত্যেক রবিবারের সকালে যে আমি যুবকদের উদ্দেশ্যে বলি তার অন্য আর একটি কারণ আছে| দ্বিতীয় আর একটি কারণ হল এই যে যারা বেশি বয়স্ক তাদের তুলনায় ত্রিশ বছরের কম বয়সের যুবকদের পরিত্রাণের অভিজ্ঞতা অর্জন করার সম্ভাবনা অনেক বেশি| আমার পড়া প্রত্যেকটি গবেষণা এবং মতামত আমাদের এই কথাই বলছে| এবং আমার নিজের অভিজ্ঞতাও দেখায় যে এইরকম সত্যিই হয়ে থাকে| যদি কোন ব্যক্তিকে পরিত্রাণ করা হয়েছে, তাহলে দেখা যায় যে সেটা সাধারনত ঘটেছে তার ষোল থেকে প্রায় পঁচিশ বছর বয়সের মধ্যে| আমি বুঝি যে সেখানেও ব্যতিক্রম আছে, কিন্তু তার সংখ্যা খুব বেশি নয়|কিভাবে আমরা এর ব্যাখ্যা করতে পারি? এর ব্যাখ্যাগুলির মধ্যে একটা হল এই যে যুবক ব্যক্তিরা সবেমাত্র উপলব্ধি করতে শুরু করেছে যে জীবন হল শ্রমসাধ্য এবং কঠিন| আপনি সবেমাত্র উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন যে আপনি মরণশীল, মানে আপনি মারা যাবেন| এবং সবেমাত্র আপনি দেখতে শুরু করেছেন যে জগত হচ্ছে একটা আতঙ্কময় এবং প্রায়শই এক একাকী স্থান| উন্মত্ত কার্য্যকলাপ, এবং বিভিন্ন বিকল্প উপায়ে আপনার ভয় চেপে রাখতে আপনি এখনও শেখেননি|

    যুবকেরা সবেমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে জীবনের শুরুতে অবস্থান করছে, আর আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিজেকে প্রশ্ন করছেন যে, ‘‘কিভাবে আমি এমন এক শীতল, ভালবাসাহীন এবং একাকী জগতে বসবাস করব?’’ এবং সেই কারণে, আমি বারে বারে এই একাকীত্বের ধারণার প্রতি ফিরে আসি| ওহ, আমি খুব ভাল করে বুঝি যে এই একাকীত্বের বিষয়টি প্রত্যেক যুবকের কাছে সমান আবেদন জানায় না| আমি জানি যে আপনাদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে শিখে নিয়েছেন যে একাকীত্ব বিষয়ক চিন্তাভাবনা এড়ানোর জন্য কিভাবে উন্মত্ত কার্য্যকলাপ এবং বিকল্প উপায়ের কৌশলগুলিকে ব্যবহার করা যায়| এবং আমি জানি যে যারা সেই কৌশলগুলি শিখে নিয়েছেন তারা আমার প্রচারগুলির প্রতি মনযোগ দেবেন না| কিন্তু আমি এটাও জানি যে এখানে যে কোন জায়গায় একটি শান্ত ছেলে এবং একটি মননশীল মেয়ে আছে যারা বাড়ি ফিরে যাবে এবং ভাবে, ‘‘সেই বৃদ্ধ মানুষটি আজ আমার সঙ্গে কথা বলেছেন| বরং এটাই ভাল যে ফিরে যাই এবং আবার তার প্রচার শুনি|’’

    এবং আজ সকালে এই সমস্ত মননশীল যুবক বা যুবতীর উদ্দেশ্যেই আমি প্রচার করছি| আমার বিষয়বস্তু হন একাকীত্ব - শীতল, কঠিন, আতঙ্কপূর্ণ, হৃদয়বিদারক একাকীত্ব| এটা এর আগে কখনও সুব্যক্ত করা হয়নি, এবং কখনও আরও সম্পূর্ণভাবে অনুভূত হয়নি, তার তুলনায় যখন যীশু ক্রুশের উপর থেকে ক্রন্দন করে বলেছিলেন,

    ‘‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ (মথি 27:46)|

    আপনার মনের চোখ দিয়ে তাঁর ছবি তুলে রাখুন| গেৎসিমানীর উদ্যানে যখন তিনি একাকী প্রার্থনা করছিলেন, সেইসময়ে সৈন্যেরা তাঁকে গ্রেফতার করেছিল| তারা তাঁর পোষাক ছিঁড়ে দিয়েছিল এবং মারের চোটে তাঁকে অর্দ্ধমৃত করে ফেলেছিল| তারা তাঁর মাথায় একটা কাঁটার মুকুট জোর করে বসিয়ে দিয়েছিল| যখন তিনি রাস্তা দিয়ে নিজের ক্রুশ টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তারা তাঁর প্রতি উপহাস এবং ঠাট্টা-তামাশা করছিল| তারা তাঁর হাত ও পা পেরেক দ্বারা বিদ্ধ করেছিল| তারা ক্রুশটিকে খাড়া করে দিয়েছিল| তাঁর দেহ সেখানে ঝুলছিল যখন তারা তাঁর প্রতি ঘৃণাভরে চিৎকার করছিল| অবশেষে, তিনি কেঁদে উঠেছিলেন,‘‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ (মথি 27:46)|

    এই কান্নার তাৎপর্য্য বুঝতে হলে, আমাদের অবশ্যই দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে|

    I. প্রথমত, এই যীশু মানুষটি কে ছিলেন?

    তিনি কোন সাধারন মানুষ ছিলেন না| বাইবেল বলছে যে ঈশ্বর ‘‘আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন’’ (যোহন 3:16)| এই মানুষটি যিনি কেঁদে উঠেছিলেন তিনি হলেন ঈশ্বরের একজাত পুত্র| এছাড়া তিনি আরও বলেছিলেন

    ‘‘জগত হইবার পূর্বে [পিতা ঈশ্বর] তোমার কাছে আমার যে মহিমা ছিল’’ (যোহন 17:5)|

    যিনি ক্রুশের উপর থেকে কেঁদে উঠেছিলেন সেই মানুষটি হলেন যীশু খ্রীষ্ট, অনন্ত ত্রিত্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি| পিতা ঈশ্বরের সঙ্গে তিনি এতটাই সংযুক্ত ছিলেন যে তিনি বলেছিলেন,

    ‘আমি ও আমার পিতা এক’’ (যোহন 10:30)|

    পিতা ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্টের মধ্যকার একাত্মতা অনন্ত অতীত থেকে অনন্ত ভবিষ্যত পর্যন্ত বিরাজমান| তিনিই ঈশ্বরের বাক্য|

    ‘‘আদিতে বাক্য ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন| তিনি আদিতে ঈশ্বরের কাছে ছিলেন| সকলই তাঁহার দ্বারা হইয়াছিল; যাহা হইয়াছে তাহার কিছুই তাঁহা ব্যতিরেকে হয় নাই’’ (যোহন 1:1-3)|

    ‘‘আর সেই বাক্য মাংসে মূর্ত্তিমান হইলেন, এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন’’ (যোহন 1:14)|

    যীশু স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিলেন| যীশু, ত্রিত্বের সেই দ্বিতীয় ব্যক্তি, পৃথিবীতে বসবাস করেছিলেন| কিন্তু তিনি তাঁর পার্থিব জীবনের সবসময়ে পিতা ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থেকেছিলেন| এমনকি সেই অন্ধকার গেৎসিমানী উদ্যানে, যখন শিষ্যেরা ঘুমিয়ে পড়েছিল, যীশু প্রার্থনা করেছিলেন এবং পিতা ঈশ্বরের সঙ্গে সহভাগিতা স্থাপন করেছিলেন| এমনকি যখন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং তাঁর মিথ্যা বিচার হয়েছিল, তখনও ঈশ্বর তাঁর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে ছিলেন| এবং যখন তারা তাঁকে বেত্রাঘাত করেছিল এবং তারপরে তাঁকে ক্রুশারোপিত করেছিল, তখনও তিনি ঈশ্বরের প্রতি ফিরতে এবং প্রার্থনা করতে সমর্থ ছিলেন,

    ‘‘পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর; কেননা ইহারা কি করিতেছে তাহা জানে না’’ (লূক 23:34)|

    কিন্তু তখন সব অন্ধকারে পরিপূর্ণ ছিল|

    ‘‘পরে বেলা ছয় ঘটিকা হইতে নয় ঘটিকা পর্য্যন্ত সমুদয় দেশ অন্ধকারময় হইয়া রহিল| আর নয় ঘটিকার সময় যীশু উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া ডাকিয়া কহিলেন, এলী, এলী, লামা শবক্তানী? অর্থাৎ, ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ (মথি 27:45-46)|

    সেই শোচনীয় সময়ে সমস্ত পৃথিবীর উপরে নেমে আসা অন্ধকার ছিল সেই অন্ধকারের একটি প্রতিচ্ছবি যা প্রথম বারের জন্য পিতা ঈশ্বর থেকে পুত্র ঈশ্বরকে আলাদা করেছিল| এর আগে কখনও ঈশ্বরের পুত্রকে তাঁর স্বর্গীয় পিতার থেকে আলাদা করে দেওয়া হযনি, কিন্তু এখন সেইরকম করা হল| এবং সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে তিনি কেঁদে উঠেছিলেন,

    ‘‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ (মথি 27:46)|

    এই মানুষটি কে? তিনি হলেন যীশু, সেই অনন্তকালীন এবং ঈশ্বরের একজাত পুত্র - অনন্তকালের মধ্যে প্রথমবারের জন্য তাঁর স্বর্গীয় পিতা থেকে যিনি সম্পূর্ণভাবে পৃথকীকৃত|

    II. দ্বিতীয়ত, কেন তিনি চীৎকার করেছিলেন ?

    আপনাদের কাছে এই বিষয়টি সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে আমি খুব অসুবিধা অনুভব করছি| আশ্চর্য্যের কিছুই নেই! খ্রীষ্টের এই বাক্যগুলি প্রকৃতভাবেই সব ব্যাখ্যার উর্দ্ধে| স্পারজিয়নেরও একই ধরনের অসুবিধা ছিল| তিনি বলেছিলেন যে, একজন লোকও এই বাক্যগুলি, সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারে না| স্পারজিয়ন বলেছিলেন,

          মার্টিন লুথার [বিখ্যাত সংস্কারের নেতা] তাহার গবেষণায় এই পাঠ্যাংশের গুণ বিবেচনার জন্য বসিয়াছিলেন| ঘন্টার পর ঘন্টা ধরিয়া এই শক্তিশালী ঈশ্বরের মানুষটি নিশ্চল অবস্থায় বসিয়া ছিলেন; এবং যাহারা তাহার জন্য অপেক্ষা করিতেছিলেন তাহারা, পুনঃ পুনঃ, ঘরের ভিতরে আসিয়াছিলেন এবং তিনি তার ধ্যানে এত মগ্ন ছিলেন যে সেই লোকেরা ভাবিয়াছিল যে তিনি মারা গিয়াছেন| তিনি হাত বা পা কিছুই নড়াইতেছিলেন না, এবং খাদ্য বা পানীয় কিছুই গ্রহণ করিতেছিলেন না; কিন্তু তার দুই চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া বসিয়াছিলেন, যেমন কেহ সমাধিস্থ অবস্থায় থাকে সেইরূপ অবস্থায় ছিলেন, ভাবিতেছিলেন সেই আশ্চর্য্যজনক বাক্যের কথা, ‘‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ এবং যখন, বহুদীর্ঘ এক সময়ের পর, যে সময়ে মনে হইতেছিল যে তাহার চারিপার্শ্বে ঘটিয়াছে এমন সমস্ত কিছুই তিনি হারাইয়াছেন, তিনি তাহার আসন ছাড়িয়া উঠিলেন, কেহ তাহাকে বলিতে শুনিয়াছিল, ‘‘ঈশ্বর ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করিতেছেন! কোন মনুষ্য উহা বুঝিতে পারে না;’’ এবং তিনি তাহার পথে চলিয়া গিয়াছিলেন| যদিও ব্যবহার করিবার পক্ষে ইহা একটি কষ্টকর সঠিক ব্যাখ্যা - আমি এই বিষয়ে মন্তব্য করিতে দ্বিধাবোধ করি - তাহা সত্ত্বেও আমি আশ্চর্য্যাণ্বিত হই নাই যে আমাদের পাঠ্যাংশ স্বয়ং সেই আলোকে নিজেকে লুথারের মনে উপস্থাপিত করিয়াছে| ইহা বলা হইয়াছে যে লুথারকে মনে হইতেছে যেন তিনি একজন মানুষের মতন, যিনি গভীর খনিগর্ভে অন্ধকারে নিমজ্জিত হইয়াছিলেন এবং পরে পুনরায় আলোকে উঠিয়া আসিয়াছিলেন| আমি বেশি করিয়া অনুভব করিতেছি একজনের মতন যিনি খনিগর্ভের অন্ধকারে নিমজ্জিত হন নাই, কিন্তু যিনি উহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়াছিলেন - অথবা এমন একজনের মতন যিনি নিম্নগামী পথের এক অংশীদার হইয়াছিলেন, এবং যেহেতু অস্পষ্ট অন্ধকার অতিক্রম করিতেছিলেন সেই কারণে ভয়াতুর হইয়াছিলেন, কিন্তু যিনি সাহস করেন নাই বেশি গভীরে যাইতে কারণ এই ক্রন্দন [‘‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’] অতীব গভীর; কোন মানুষ কখনও ইহার গভীরতার পরিমাপ করিতে সক্ষম হইবে না| সেই কারণে, আমি ইহা ব্যাখ্যা করিবার বিন্দুমাত্র চেষ্টাও করিতেছি না (C. H. Spurgeon, “The Saddest Cry From the Cross,” The Metropolitan Tabernacle Pulpit, Pilgrim Publications, 1977, volume XLVIII, pp. 517-518)|

    আমি লুথার এবং স্পারজিয়নের সঙ্গে একমত যে আমরা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারি না যে কিভাবে পিতা ঈশ্বর পুত্র ঈশ্বরকে ‘‘পরিত্যাগ’’ করতে পারেন| আমি এই বাক্যগুলিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব না, কিন্তু খুব সাধারনভাবে সেগুলির বিষয়ে কয়েকটি সুচিন্তিত ধারণা দেব|

    এখানে খ্রীষ্ট মানুষ হিসাবে কথা বলছেন| তিনি সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বর, কিন্তু তিনি সম্পূর্ণভাবে মানুষও বটে| এটা হল একটা হাইপোস্ট্যাটিক একাত্বতা, এবং খ্রীষ্ট হলেন ঈশ্বর-মানব| কিন্তু এখানে তিনি মানুষ হিসাবে কথা বলছেন| একমাত্র একজন প্রকৃত মানুষই বলতে পারেন যে তিনি তাঁর ঈশ্বরের দ্বারা পরিত্যক্ত হয়েছেন|

    খ্রীষ্ট ঈশ্বর দ্বারা পরিত্যক্ত হয়েছিলেন কারণ খ্রীষ্ট দ্বারা পরিত্যক্ত হওয়াটা আমাদের প্রাপ্য| সেখানে ক্রুশের উপরে খ্রীষ্ট আমাদের স্থান গ্রহণ করেছিলেন, এবং আমাদের পাপের জন্য দুঃখভোগ করেছিলেন|

    ‘‘আমাদের যাতনা সকল তিনিই তুলিয়া লইয়াছেন, আমাদের ব্যাথা সকল তিনি বহন করিয়াছেন’’ (যিশাইয় 53:4)|

    আমাদের প্রথম পিতা মাতার পাপ, যা আমাদের মধ্যে সঞ্চালিত হয়েছিল, তার দ্বারা আমরা জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্কহীনভাবে আমরা বড় হয়ে উঠেছিলাম, ঈশ্বর পরিত্যক্ত, এবং একাকী অবস্থায়; আমরা আমাদের জীবন একাকীত্বের মধ্যে অতিবাহিত করছি, ঈশ্বর বিহীন অবস্থায়, তাঁর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে, আমাদের পাপের স্বভাব এবং আমাদের কৃত প্রকৃত পাপের দ্বারা|

    ‘‘তাহারা চিত্তে অন্ধীভূত, ঈশ্বরের জীবনের বহির্ভূত হইয়াছে আন্তরিক অজ্ঞানতা প্রযুক্ত, হৃদয়ের কঠিনতা প্রযুক্ত হইয়াছে’’ (ইফিষীয় 4:18)|

    আপনি কি কখনও ভেবেছিলেন যে সেখানে একজন ঈশ্বর আছেন? আপনি কি কখনও বিস্মিত হয়েছিলেন এই ভেবে যে ঈশ্বর কেন আপনার কাছে প্রকৃত হননি? এখানে সেই উত্তর দেওয়া হল, বাইবেল থেকে - ঈশ্বর আপনার কাছে প্রকৃত হননি কারণ আপনার আধ্যাত্মিক বোধগম্যতা আপনার হৃদয়ের ‘‘অন্ধতার’’ জন্যে, ‘‘অন্ধকারাচ্ছন্ন’’ হয়ে আছে| এটাই হল কারণ যে কেন আপনি ‘‘ঈশ্বরের জীবনের বহির্ভূত|’’ গ্রীক ক্রিয়াপদের পুরাঘটিত কাল জোর দিচ্ছে ক্রমাগত চলমান অবস্থার প্রতি| এর অর্থ এই নয় যে আপনি এককালে ঈশ্বরকে জানতেন| এর অর্থ হল যে আপনি তাঁকে কখনও জানতেন না, এবং এখনও তাঁকে জানেন না| আপনি ক্রমাগত চলমান এক বিচ্ছিন্নতার মধ্যে রয়েছেন, ঈশ্বর থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন ‘‘কারণ [আপনার] হৃদয়ের কঠিনতা প্রযুক্ত হইয়াছে’’ (cf. Dr. Fritz Rienecker, A Linguistic Key to the Greek New Testament, Zondervan, 1980, p. 533)|

    আপনার সঙ্গে ঈশ্বরের মিলন ঘটানোর জন্য যীশু খ্রীষ্ট ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করেছিলেন|

    ‘‘কারণ খ্রীষ্টও একবার পাপ সমূহের জন্য দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, সেই ধার্ম্মিক ব্যক্তি অধার্ম্মিকদের নিমিত্ত, যেন আমাদিগকে ঈশ্বরের নিকট লইয়া যান’’ (I পিতর 3:18)|

    খ্রীষ্ট ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করেছিলেন ‘‘আমাদিগকে ঈশ্বরের নিকট লইয়া যাইতে,’’ আমাদের পাপী স্বভাবসকল এবং আমাদের প্রকৃত পাপসকলের জন্য আমাদের বিচ্ছিন্নতাকে দূরে সরিয়ে নিতে, এবং ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের মিলন এনে দিতে| এই কাজ করতে গিয়ে খ্রীষ্টকে আমাদের ‘‘বেদনা’’ সহ্য করতে হয়েছিল এবং ক্রুশের উপরে আমাদের ‘‘দুঃখ’’ বহন করতে হয়েছিল|

    ‘‘আমাদের যাতনা সকল তিনিই তুলিয়া লইয়াছেন, আমাদের ব্যাথা সকল তিনি বহন করিয়াছেন’’ (যিশাইয় 53:4)|

    একজন অপরিত্রাণ প্রাপ্ত পাপীর মতন, আপনাকে জগতে একা ছেড়ে যাওয়া হবে| আপনি এটা অনুভব করছেন| আপনি অনুভব করছেন যে সেখানে কিছু একটা ভুল হচ্ছে| একটি অন্ধকার এবং প্রায়শই আতঙ্কময় জগতে, যুবকেরা হলেন সেই সমস্ত লোক যারা বেশি করে তাদের একাকীত্ব, তাদের ঈশ্বর পরিত্যক্ততা অনুভব করতে তৎপর থাকেন| আর সেটাই হল কারণ যে ঈশ্বর খুব ঘন ঘন লোকদের যৌবনকালেই পরিত্রাণ করেন| যখন আপনি বয়স্ক হয়ে পড়েন তখন এই শূণ্যতা, একাকীত্বকে মাদক, বা এ্যালকোহলের মধ্যে, বা যৌন আকাঙ্খার মধ্যে, বা অর্থ উপার্জনের মধ্যে, বা আপনার ‘‘খেল পরিকল্পনা’’কে ‘‘সফল’’ করার মধ্যে নিমজ্জিত করতে শিখে যান| এবং আপনি যখন এই শূণ্যতা এবং একাকীত্ব থেকে পালানোর এই সমস্ত ‘‘কৌশলগুলি’’র মধ্যে একটির ব্যবহার শিখে যাবেন, তখন আপনার পরিত্রাত হওয়ার পক্ষে সেটা খুব দেরি হয়ে যাবে|

    ‘‘আর যেমন তাহারা ঈশ্বরকে আপনাদের জ্ঞানে ধারণ করিতে সম্মত হয় নাই, তেমনি ঈশ্বর তাহাদিগকে অনুচিত ক্রিয়া করিতে ভ্রষ্ট মতিতে সমর্পণ করিলেন’’ (রোমীয় 1:28)|

    কিন্তু আজ সকালে, যখন আপনি এখনও যুবক আছেন, ঈশ্বর আপনাদের উদ্দেশ্যে বল্ছেন| এটা হচ্ছে আপনার একাকীত্বের অনুভূতি যে ঈশ্বর আপনাকে আহ্বান করছেন, ঈশ্বর আপনার হৃদয়ের উদ্দেশ্যে বলছেন| তাহলে, শুনুন যীশুর সেই সময়ের বাক্যগুলি, যখন তিনি ক্রুশের উপরে মারা যাচ্ছিলেন,

    ‘‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ (মথি 27:46)|

    এইগুলি হল সেই বাক্য যা বিশেষভাবে যখন আমরা যুবক তখন আমাদের প্রতি বলা হয়ে থাকে| তাঁর সঙ্গে আপনার বিচ্ছেদের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য পুত্র ঈশ্বর পিতা ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুঃখভোগ করেছিলেন| আপনি ঈশ্বর থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন - এবং খ্রীষ্ট আপনার এই পাপের দেনা শোধ করেছেন! আপনি ঈশ্বরকে ভুলে গেছেন - এবং খ্রীষ্ট আপনার এই পাপের দেনা শোধ করেছেন! চটুল এবং পাপপূর্ণ কাজ করার জন্য আপনি রবিবারের পর রবিবার মন্ডলীতে আসেননি - এবং খ্রীষ্ট আপনার পাপের দেনা শোধ করেছেন! আপনি মন্ডলীতে এসেছেন, কিন্তু কখনও ঈশ্বরের কথা না ভেবে, তাঁর বাক্যগুলি কেবল ‘‘মুখস্থ’’ করেছেন - এবং খ্রীষ্ট আপনার পাপের দেনা শোধ করেছেন! আপনার ঈশ্বরবিহীনতার দেনা খ্রীষ্ট ক্রুশের উপরে শোধ করেছেন! কি ভয়ঙ্কর মূল্য তাঁকে দিতে হয়েছে!

    তারা তাঁর পোষাক ছিঁড়ে দিয়েছিল এবং মারের চোটে তাঁকে অর্দ্ধমৃত করে ফেলেছিল| তারা তাঁর হাত এবং পা ক্রুশের উপরে পেরেক দিয়ে বিদ্ধ করেছিল| অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছিল| ঈশ্বরের ক্রোধ তাঁর উপরে নেমে এসেছিল,

    ‘‘তথাপি তাঁহাকে চূর্ণ করিতে সদাপ্রভুরই মনোরথ ছিল; তিনি তাঁহাকে যাতনাগ্রস্ত করিলেন’’ (যিশাইয় 53:10)|

    আপনার কৃত পাপ সকলের জন্য, আপনার পরিবর্তে, ঈশ্বর খ্রীষ্টকে প্রতিনিধি হিসাবে শাস্তি দিয়েছিলেন| এবং সেই কারণে সবশেষে সবচেয়ে খারাপ সেই শাস্তিটি এসেছে| ইশ্বর তাঁর পুত্রকে পরিত্যাগ করেছিলেন এবং অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়েছিলেন| এবং সেই পুত্র খ্রীষ্ট একাকী আপনার সমস্ত পাপ ক্রুশের উপরে বহন করেছিলেন|

    ‘‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ (মথি 27:46)|

    সেই আতঙ্কগ্রস্ত এবং ভয়ঙ্কর প্রশ্নবোধক কান্নার উত্তর দেওয়া হয়েছে, প্রেরিত পৌলের দ্বারা, যখন তিনি বলেছিলেন,

    ‘‘কারণ খ্রীষ্টও একবার পাপ সমূহের জন্য দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, সেই ধার্ম্মিক ব্যক্তি [তিনি] অধার্ম্মিকদের [আপনি] নিমিত্ত, যেন আমাদিগকে ঈশ্বরের নিকট লইয়া যান’’ (I পিতর 3:18)|

    আপনি ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করেছিলেন, এবং ঈশ্বরের দ্বারা পরিত্যক্ত হয়ে যীশু আপনার সেই পাপের দেনা শোধ করেছিলেন, স্বয়ং - আপনার পরিবর্তে, ক্রুশে পেরেকবিদ্ধ হয়েছিলেন, একাকী, এবং পিতা ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন, যাঁকে তিনি তাঁর পূর্ণ অন্তর দিয়ে ভালবাসতেন|

    উলঙ্গ শলাকাবিদ্ধ অভিশপ্ত কাষ্ঠে,

    মৃত্যুর প্রতি প্রদর্শিত এবং উর্দ্ধে স্বর্গ,

    ক্ষতের দাগ এবং রক্ত,

    আঘাতপ্রাপ্ত প্রেমের দুঃখপূর্ণ প্রদর্শন!


    শুন কেমন তাঁর ভয়ানক আকস্মিক ক্রন্দন

    বিচলিত স্বর্গদূতেরা, যখন তাহারা দেখে;

    তাঁহার বন্ধুগণ রাত্রে তাঁহাকে পরিত্যাগ করিয়াছে,

    এবং এখন তাঁহার ঈশ্বরও তাঁহাকে পরিত্যাগ করিতেছেন!

       (“His Passion” by Joseph Hart, 1712-1768; altered by the Pastor) |

    আমরা খ্রীষ্টের বাক্যের রহস্যের কেবলমাত্র সামান্য অংশের উপরে চিন্তাভাবনা করলাম,

    ‘‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ (মথি 27:46)|

    কিন্তু আমি আশা করি যে আপনি যথেষ্ট পরিমানে শুনেছেন এটা জানার জন্যে যে আপনার পাপের দেনা শোধ করতে যীশু মৃত্যুবরণ করেছেন, এবং তিনি আরোহন করেছেন, হ্যাঁ, স্বর্গে ঈশ্বরের দক্ষিনে| আমি আশা করি যে আপনি যথেষ্ট শুনে ফেলেছেন এটা বোঝার জন্য যে আপনার একমাত্র আশা খ্রীষ্টের উপরে স্থিত - কারণ সেখানে অন্য আর কোনরকমের সুদৃঢ় আশা নাই| আমি প্রার্থনা করছি যে আপনি সরাসরি খ্রীষ্টের কাছে আসবেন এবং তাঁকে গ্রহণ করবেন এবং তাঁর চিরন্তন রক্তের দ্বারা আপনার কৃত সমস্ত পাপ থেকে শুচি হবেন - কারণ সেখানে জগতে অথবা অনন্তকালের মধ্যে, অন্য কোন পরিত্রাণ নেই| আমেন|

    .......................................................................

    ‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ (মথি 27:46)|

    I.   প্রথমত, এই যীশু মানুষটি কে ছিলেন?

    যোহন 3:16; 17:5; 10:30; 1:1-3, 14; লূক 23:34; মথি 27:45-46 |

    II.  দ্বিতীয়ত, কেন তিনি চীৎকার করেছিলেন? 

    যিশাইয় 53:4; ইফিষীয় 4:18; I পিতর 3:18; রোমীয় 1:28; যিশাইয় 53:10 |


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS